নিজস্ব চিত্র।
স্টেশনের সামনে জড়সড় হয়ে বসে ছিলেন এক ভবঘুরে। ময়লা পোশাক, মাথায় অযত্নের জটা। আর পাঁচ জন এমন দেখলে দয়াপরবশ হয়ে কিছু অর্থ দিয়েই দায় সারবেন। আরপিএফ কর্মী মেদিনীপুর স্টেশনে কর্মরত সুবেদার দীপক ঘোষ তেমনটা করেননি। ভবঘুরেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে, চুল কাটিয়ে, স্নান করিয়ে, তার পর রেখে এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। দীপকের এই কাজে গর্বিত তাঁর সহকর্মীরা।
আরপিএফ কর্মীদের ডিউটি বুঝিয়ে দেওয়া ছাড়াও সারাক্ষণ সিসি ক্যামেরার সামনে বসে স্টেশনের নজরদারি চালিয়ে যান। সেই সময় তিনি দেখতে পেয়েছিলেন এক ভবঘুরেকে। মাথা ভর্তি জট পাকানো চুল নিয়ে বসে রয়েছেন বেশ কিছু দিন ধরে। মাঝে মধ্যে যাত্রীরা কিছু খাবার দিলে খাচ্ছেন। কিন্তু কথা বলতে পারছিলেন না সেই ব্যক্তি।
আনুমানিক ৫৫ বছরের ওই ব্যক্তিকে আরপিএফ অফিসের বাইরে নিয়ে যান দীপক। তাঁকে বসিয়ে জট পাকানো চুল কাটানোর পাশাপাশি দাড়ি কামিয়ে দেন। নোংরা জামা খুলিয়ে নিজেই তা প্যাকেটে ভরে রাখেন, পরে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেন। ওই ভবঘুরেকে সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে তাঁর খাবারেরও ব্যবস্থা করেন দীপক। পরে শহরের নজরগঞ্জ এলাকায় বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন।
দীপকের বাড়ি শহরের রাঙামাটি এলাকায়। ২৫ বছরের চাকরি জীবনে আরপিএফ, এনএসজি হয়ে আবার আরপিএফে ফিরে এসেছেন। দীপক জানান, ব্লাড ক্যানসারে স্ত্রী শিবানী ন’বছর আগে মারা যান। প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করলেও বাঁচানো যায়নি। ছেলে এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং মেয়ে দ্বাদশের ছাত্রী। ওই ভবঘুরেকে দেখে অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি সে পথে হাঁটেননি। উল্টে তাঁকে উদ্ধার করে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। দীপক বলছেন, ‘‘এটাই তো মানুষের ধর্ম হওয়া উচিত।’’
ওসি আরপিএফ বি কে যাদব বলেন, ‘‘দীপক পুলিশে কাজ করেন। মাঝে মধ্যেই এমন কাজও করেন। ওই ভবঘুরে ব্যক্তিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছেন। আমরা কিছুই জানতাম না। পরে একটা ভিডিও দেখে সব জানতে পেরেছি। দীপকের জন্য গর্ব বোধ করছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।