বনাঞ্চল বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প চালু রয়েছে। বন দফতরের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই কর্মসূচি চলে। তবে এই সব প্রকল্পে চারাগাছ লাগানোর পরেও তার দেখাশোনার ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ বার বারই উঠেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম ভেঙে গাছ কেটে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতে গাছ লাগানোর পর তার পরিচর্যা ও সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে সরকারি অফিস, রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার-সহ জনবহুল এলাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে রাজ্য সরকার ‘স্টে গ্রিন-স্টে ক্লিন’ কর্মসূচি নিয়েছে। আগামী পয়লা অগাস্ট থেকে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ওইদিন জেলা পরিষদ অফিস চত্বরে বনসৃজনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হবে। জেলা সভাধিপতি দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘পরিবেশের সুরক্ষার স্বার্থে বনাঞ্চলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রয়োজন। তাই বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারাগাছ লাগানোর পরে তার নিয়মিত পরিচর্যার জন্য রাজ্য সরকার নতুন কর্মসূচি নিয়েছে। কর্মসূচি অনুযায়ী গাছ লাগানোর পরে সেগুলি বড় না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। এ ছাড়াও এই কর্মসূচিতে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত সাফাইয়ের জন্যও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। অগস্ট থেকেই এই কর্মসূচি চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কৃষিপ্রধান এলাকা হলেও পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাকৃতিক বনভূমির পরিমাণ খুব কম। বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে বন দফতরের উদ্যোগে প্রতি বছর সামাজিক বনসৃজনের পাশাপাশি পঞ্চায়েতগুলি একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বনসৃজনের কাজ করে। তবে জেলায় বনাঞ্চলের পরিমাণ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘স্টে গ্রিন-স্টে ক্লিন’ কর্মসূচিকে কাজে লাগানো হবে। গাছ লাগানোর পর সেগুলিকে রক্ষার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বনাঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। গাছ লাগানোর পর কমপক্ষে দুবছর ধরে নিয়মিত তার পরিচর্যা করতে হবে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি নিজস্ব তহবিল থেকে এই খাতে অর্থ খরচ করতে পারবে। জেলা প্রশাসন, পঞ্চায়েত দফতর ও বন দফতর যৌথভাবে এই কাজ করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি সরকারি জায়গায় গাছ লাগানোর পর তা রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া স্কুল-কলেজ-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গাছ লাগানো হবে। বন দফতর, সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পরিষদ (সিএডিসি) এবং একশো দিনের কাজে চারাগাছ তৈরিতে যুক্ত স্বসহায়ক গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকে চারাগাছ নেওয়া হবে। বকুল, জাম, আম প্রভৃতি বৃক্ষজাতীয় ও বিভিন্ন ফলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের বন ও ভূমি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মৃণালকান্তি দাস বলেন, ‘‘চলতি বছরে অরণ্য সপ্তাহে জেলায় প্রায় ১০ লক্ষ গাছের চারা লাগানো হয়েছে। নতুন এই কর্মসূচিতে জেলায় ৩০ লক্ষ চারা গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। চারাগাছ লাগানোর পর সেগুলি রক্ষার যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে জেলায় বনাঞ্চল বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’