জঙ্গলে আগুন না লাগানোর আবেদন করে গাছে গাছে পোস্টার দিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তবে তাতে আগুন লাগানোর প্রবণতা কমেনি। শালবনির পাথরকুমকুমির জঙ্গলে। ছবি: কিংশুক আইচ
নজর এড়িয়ে অবৈধ ভাবে গাছ কেটে নেওয়ার প্রবণতা আটকাতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বন দফতর। তবুও বিনা অনুমতিতে গাছ কাটার অভিযোগ উঠছে। এই আবহে জেলায় এসে গাছ কাটার প্রসঙ্গে বন দফতরের কড়া পদক্ষেপের কথা শুনিয়ে গিয়েছেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সৌমিত্র দাশগুপ্ত। তারপরই অনুমতি ছাড়া গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা একেবারে বন্ধ করতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বন দফতর। জানা গিয়েছে, চন্দ্রকোনা রোডের মতো গাছ কাটার প্রবণতা রয়েছে এমন এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারি যেমন চালানো হবে, তেমনি অভিযোগ পেলেই যাতে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করা যায়— সে জন্য গাড়ি, কর্মী-সহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা রাখা হবে।
গত বছর এপ্রিলে চন্দ্রকোনা রোডের কড়সা অঞ্চলে অনুমতি ছাড়াই পঞ্চায়েতের প্রচুর ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে পাচার করার অভিযোগে শোরগোল পড়েছিল জেলায়। এই কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। তাঁর কড়া অবস্থানে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ তৎপরতা বাড়িয়ে গ্রেফতার করেছিল কড়সা পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ শাসকদল তৃণমূলের স্থানীয় কয়েকজনকে। অভিযুক্তেরা জামিন পেলেও, সেই মামলা এখন বিচারাধীন। এই অবস্থায় কিছুদিন আগে সেই কড়সা অঞ্চলেই পঞ্চায়েতের ছোটতাড়া এলাকার ফলের বাগান থেকে অনেকগুলি আকাশমণি গাছ কেটে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। কয়েকদিন আগে এই অঞ্চলের পাশের অঞ্চল উড়িয়াসাইতেও সরকারি জমির উপর হওয়া প্রায় ১০০টি গাছ কেটে নেওয়া হয় নজর এড়িয়েই। দু’টি ক্ষেত্রেই খবর পেয়েই দ্রুত অভিযান চালিয়ে বন দফতর কাটা গাছের অংশগুলি বাজেয়াপ্ত করে। তবুও মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থানেও গাছ কাটার প্রবণতা না বন্ধ হওয়ায় খোঁচা দিতে থাকে বিরোধীরা। এই সময়ই কয়েকদিন আগে জেলার গড়বেতা, শালবনি এলাকায় বন দফতরের কর্মসূচিতে এসেছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেছিলেন, ‘‘আগের তুলনায় এখন অবৈধ ভাবে গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে বন দফতর এ রকম খবর পেলে প্রতিক্ষেত্রেই দ্রুত পদক্ষেপ করছে।’’
রাজ্যের বন বিভাগের প্রধান মুখ্য বনপালের এই পরামর্শ পেয়ে গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা আটকাতে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। জেলার বন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ বা খবর পেলেই দ্রুত অভিযানে যাওয়া হচ্ছে, এর জন্য সব সময়ই বিট বা রেঞ্জ অফিসে গাড়ির ব্যবস্থা থাকছে। বন দফতরের কর্মীরাও তৈরি থাকছেন, রাতের অভিযানের জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।’’ এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালানোর পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট ব্লকের কাঠমিলগুলির সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বন দফতর। বন বিভাগের রূপনারায়ণ ডিভিশনের বনাধিকারিক মণীশ যাদব বলেন, ‘‘বিনা অনুমতিতে গাছ কাটলেই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’