শ্রীনু নায়ডু
দেখতে দেখতে বছর ঘুরল। তবে এখনও খড়্গপুরের রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনে অভিযুক্তদের সকলের নাগাল পেল না পুলিশ। চার্জশিটে নাম থাকা ১৪ জনের মধ্যে আর এক রেলমাফিয়া বাসব রামবাবু-সহ ১৩ জন ধরা পড়লেও কে কাশী রাও নামে এক অভিযুক্ত এখনও পলাতক। রামবাবুরই সহযোগী কাশী। পুলিশ সূত্রে খবর, তার খোঁজে অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ নানা জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। শ্রীনু-মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী সমরকুমার নায়েক বলেন, “পুলিশ ওই অভিযুক্তের খোঁজে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে। তবে এখনও হদিস মেলেনি।’’
২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি ‘গ্যাংওয়ার’-এর সাক্ষী ছিল খড়্গপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। ওই দিন বিকেলে নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় তৃণমূল ওয়ার্ড কার্যালয়ের মধ্যেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল শ্রীনু এবং তাঁর ‘ডান-হাত’ ধর্মা রাও। শ্রীনুর স্ত্রী পূজা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেরই তৃণমূল কাউন্সিলর। ২০১৫-এর পুরভোটে বিজেপির টিকিটে জিতলেও পরে তৃণমূলে চলে আসেন পূজা।
শ্রীনু খুনে জড়িতদের কেউই যে ছাড় পাবে না, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে খড়্গপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। পূজাও আশাবাদী, শ্রীনুর খুনিদের সকলেরই শাস্তি হবে। তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত ভাল ভাবে এগিয়েছে। মামলাও ভাল ভাবে এগোচ্ছে। খুনিদের শাস্তি হবেই।’’
ঘটনার ৮৭ দিনের মাথায় গত বছর ৮ এপ্রিল মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে শ্রীনু হত্যা মামলার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। প্রয়োজনে ‘স্প্লিমেন্টারি চার্জশিট’ জমা দেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছিল, রামবাবুই ঘটনার মূলচক্রী। মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী সমরকুমার নায়েক বলেন, “শ্রীনুকে খুন করে খড়্গপুরে নতুন করে মাফিয়ারাজ ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল রামবাবু।” এ রাজ্যে, ভিন্ রাজ্যে বারবার বৈঠক করে খুনের ছক কষা হয়েছিল।
গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্ধ্রপ্রদেশের তানুকা থেকে রামবাবুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার আগে-পরে একে একে ধরা পড়ে আরও ১২জন। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন ছাড়াও অস্ত্র-আইন, বিস্ফোরক- আইনে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারা আনা হয়েছে। নানা কারণে একাধিকবার মামলার তদন্তকারী অফিসার (আইও) বদল হয়েছে। বিচারপর্ব চলছে মেদিনীপুরের বিশেষ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই মামলায় সাক্ষী রয়েছেন ৮৯ জন। ইতিমধ্যে ৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন শ্রীনুর স্ত্রী পূজা, শ্রীনুর দাদা এ বোগেশ্বর রাও প্রমুখ।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে কবে? বিশেষ সরকারি আইনজীবী সমরবাবু বলেন, “আর মাস ছয়-সাতেকের মধ্যেই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে বলে আশা করছি।’’