TMC

TMC: একুশে ‘ব্রাত্য’ নেতাই

কোথাওই ডাক পাননি নেতাইয়ের স্বজনহারারা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

লালগড়: ২১ জুলাই ছন্দপতন! নেতাই গ্রামে তৃণমূলের শহিদ স্মরণে ডাকই পেলেন না নেতাই-কাণ্ডে স্বজনহারারা। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে এ বার ওই শহিদ পরিবারগুলির জন্য সাম্মানিক ও উপহারও পাঠানো হয়নি।

Advertisement

গত বছর থেকে করোনা আবহে শহিদ পরিবারগুলিকে ধর্মতলার সমাবেশে ডাকা হচ্ছে না। গত বছর দলের দোলা সেন লালগড়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে নেতাইয়ের শহিদ পরিবারগুলিকে সাম্মানিক ও উপহার দিয়েছিলেন। এ বার ক’দিন আগে দোলা এসেছিলেন কেশপুরে। তবে নেতাই ‘ব্রাত্য’ থেকেছে। বুধবার নেতাই গ্রামের শহিদ বেদিতে তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের দলীয় কর্মসূচি হয়। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের লালগড় ব্লক সভাপতি শ্যামল মাহাতো। ছিলেন লালগড় অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি সরজিত রায়, জেলা কমিটির সদস্য অনুপ সাহস রায়। ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথা মোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বক্তৃতা সম্প্রচারের মূল অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু-সহ জেলার নেতা-নেত্রীরা। কোথাওই ডাক পাননি নেতাইয়ের স্বজনহারারা।

নেতাই গ্রামের কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা সরজিত বলেন, ‘‘নেতৃত্বের তরফে কোনও নির্দেশ না থাকায় কাউকে ডাকা হয়নি।’’ শ্যামল জুড়ছেন, ‘‘কর্মসূচি হচ্ছে সবাই জানতেন। তবে এ বার রাজ্য থেকে সাম্মানিক পাঠানো হয়নি।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলালও বলছেন, ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মতো কর্মসূচি হয়েছে।’’

Advertisement

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএমের শিবির থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। ৪ মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর কলকাতায় তৃণমূলের ২১ জুলাই কর্মসূচিতে ডাক পেতেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সম্মানিত করা হত। নেতাই-কাণ্ডে নিহত গীতালি আদকের মেয়ে জনতা আদক বলছেন, ‘‘গত বছরও ১৮ জুলাই দোলাদি শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সাম্মানিক দিয়েছিলেন। এ বার কিছু হয়নি। গ্রামের কর্মসূচিতেও আমন্ত্রণ পাইনি।’’ শহিদ পরিবারের সদস্য শান্তনু ঘোড়ই বলেন, ‘‘কেন সাম্মানিক আসেনি সেটা জানা নেই।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক স্বজনহারার খেদ, ‘‘গত বছরও নেতাইয়ের কর্মসূচিতে ডাকা হয়েছিল। এ বার আমাদের কেন ভুলে যাওয়া হল বুঝতে পারছি না।’’

এই ভোলবদলের পিছনে উঠে আসছে রাজনীতির অঙ্ক। নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সদস্য তথা তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক যুব সভাপতি তন্ময় রায় গত নভেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন। চলতি বছর ৭ জানুয়ারি নেতাই দিবসে শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির আপত্তিতে নেতাই গ্রামে শহিদ স্মরণ সভা করতে পারেনি তৃণমূল। কিলোমিটার তিনেক দূরে লালগড়ের হাটচালায় ওই সভা হয়েছিল। ওই দিন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য প্রথমে নেতাইয়ে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শহিদ বেদি শুদ্ধ করে সেখানে শ্রদ্ধা জানান পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্ররা। বিধানসভা ভোটের পরে তন্ময় বিজেপি ছেড়েছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি রামগড়ে থাকি। তাই আমার কাছে কোনও খবরও নেই।’’

সূত্রের খবর, নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির একাংশের সঙ্গে বিজেপি সংস্রবের অভিযোগ থাকায় এ বার সুকৌশলে শহিদ পরিবার ও কমিটির সভাপতিকে এড়িয়ে গিয়েছে শাসকদল। ওই কমিটির সভাপতি পদ থেকে দ্বারকানাথ পণ্ডাকে সরাতেও তৎপর তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। গত বছর দ্বারকানাথ গ্রামে ছিলেন না। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘শহিদ বেদিতে কর্মসূচি হল, অথচ শহিদ পরিবার জানতে পারল না। আমাকেও কিছু জানানো হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement