লরি দুর্ঘটনায় মৃত দৃষ্টিহীন বাউল। প্রতীকী চিত্র।
অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে লরির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই প্রতিবন্ধী শিল্পী। লরির ধাক্কায় তাঁদের মধ্যে এক শিল্পীর মৃত্যু হল। গুরুতর আহত হলেন তাঁর সঙ্গী আরেক শিল্পী। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টে নাগাদ ঘটনাটি নিমতৌড়ি স্মৃতি সৌধের সামনে হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম দীনেশ মাহাত (৩০)। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আনন্দপুর থানা এলাকার জুনপাড়া গ্রামে। দৃষ্টিহীন দীনেশ বাউল শিল্পী ছিলেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অশান্ত বর নামে বছর পঞ্চান্নের আরেক শিল্পী। তাঁকে উদ্ধার করে তমলুক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত যোগ নৃত্য শিল্পী। তাঁর বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগণার সন্দেশখালি এলাকায়। তাঁর মাথা, হাত ও পায়ে আঘাত লেগেছে। ওই দু’জন শিল্পী তমলুকের নিমতৌড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নাচ-গানের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিমতৌড়ির ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্য প্রতিবন্ধী শিল্পীদের সঙ্গে দীনেশ এবং অশান্ত বুধবার ভগবানপুর এলাকায় একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। গভীর রাতে অনুষ্ঠান শেষে গাড়িতে চেপে ওই দলের সদস্যরা নিমতৌড়ি ফিরে হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কের ধারে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসের সামনে নেমে যান। এরপর দীনেশ ও অশান্ত বাড়ি ফেরার জন্য বাস ধরতে জাতীয় সড়কের পাশে যান। সেখানে সে সময় সার দিয়ে বালি বোঝাই লরি দাঁড় করানো ছিল। দু’জনে এমনই একটি লরির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই সময় মেচেদা থেকে হলদিয়াগামী একটি লরি প্রবল গতিতে দাঁড়িয়ে থাকা বালি বোঝাই লরির পিছনে ধাক্কা মারে। ওই ধাক্কায় লরি সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং সামনে থাকা দীনেশ চাপা পড়েন। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। ধাক্কায় আহত হন দীনেশের সাথে থাকা আশন্ত। বালি বোঝাই লরিতে ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে যায় অন্য লরিটি। চালক ও খালাসি পালিয়ে যায়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে তমলুক থানার পুলিশ। তারা আহত আশন্তকে উদ্ধার করে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। দীনেশের ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা স্মৃতি সৌধের সামনে হলদিয়া–মেচাদা জাতীয় সড়কের একাংশ দখল করে সার দিয়ে রাখা বালি বোঝাই লরিকে দায়ী করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার অফিসের কয়েকশ মিটার দূরে নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধের সামনে জাতীয় সড়কের ধারে প্রতিদিন ২৫-৩০টি বালি বোঝাই লরি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এভাবে লরি সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার জেরে পথচারী, সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকেরা খুবই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। কাছেই নিমতৌড়ি বাসস্টপ এবং পুলিশের ট্রাফিক পোস্ট রয়েছে। তা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরে এইভাবে বেআইনি ‘পার্কিং’ চলছে। নিমতৌড়ির প্রতিবন্ধী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক যোগেশ সামন্তের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার অভিযোগ জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এভাবে বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে আমাদের সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক শিল্পীর মৃত্যু হল।’’ এদিন দুর্ঘটনার পরে পুলিশ স্মৃতিসৌধের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা সমস্ত বালি বোঝাই লরি সরিয়ে দিয়েছে।