পটাশপুরে অস্থায়ী ছাউনিতে দিন কাটাচ্ছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। — নিজস্ব চিত্র।
নদীর প্লাবনে ঘর ভেঙেছে বছরখানেক আগে। সেই থেকে আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় নেমেছে ১৫-২০টি পরিবার। বছর গড়াতে চললেও বদলায়নি পরিস্থিতি। এই ছবি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের তালছিটকিনি এলাকার। আর এ নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতর।
দিনটা এখনও স্মরণে আছে তালছিটকিনির বাসিন্দাদের। ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভেঙেছিল কেলেঘাই নদীর বাঁধ। সেই সময় জলের তোড়ে ভেসে যায় বহু কাঁচা এবং পাকা বাড়ি। সেই থেকেই রাস্তার পাশে ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই এখন রাত কাটান সেই অস্থায়ী ছাউনিতে। ওই দলে থাকা স্থানীয় আঙুর ভুঁইয়া নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘গত বছর জলের তোড়ে পাকা বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে গিয়েছে। এক সময় যেখানে বাড়ি ছিল সেখানে এখন বিশালপুকুর হয়ে গিয়েছে। সেই পুকুর ভরাটের চেষ্টা করলেও বর্ষায় তা আবার ধসে যায়। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ করেনি কেউ। এক বছর ধরে বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তার পাশে ত্রিপল খাটিয়ে বাস করছি। পেট চালাতে এখানেই বাচ্চাদের ফেলে রেখে কাজে যেতে হচ্ছে। কবে আবার ঘরে ফিরতে পারব বা আদৌ কোনও দিন বাড়ি ফিরে পারব কি না জানি না।’’
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতা সত্যেন ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, “বন্যায় সব কিছু খুইয়ে অনেক পরিবার তাঁদের আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। অনেকে আবার রাস্তার পাশে ত্রিপল খাটিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। কেউ আবার বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ সরকারের তরফ থেকে দুর্গতদের কোনও সহযোগিতা করা হয়নি। গত এক বছর ধরে চরম দুর্দশার মধ্যে কাটাতে বাধ্য হচ্ছে পরিবারগুলি।’’
ওই পরিবারগুলির দুর্দশা স্বীকার করে নিয়েছেন পটাশপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত এবং পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ শেখ আব্দুল আহাদ আলি। তিনি বলেন, “গত বছর কেলেঘাইয়ের বাঁধ যে জায়গায় ভেঙেছিল সেই এলাকার অনেক ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এর জেরে পরিবারগুলি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ওঁরা খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। সেগুলিকে পুনরায় তৈরি করতে সময় লাগবে। আমরাও চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ওঁরাও চেষ্টা করছেন। যাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁদের আমরা তৎক্ষণাৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তবে ঘর তৈরি করতে কিছু নিয়মকানুন আছে। তাই সময় লাগবে।’’ এ নিয়ে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনা নিয়ে রাজনীতি করছে। তার মধ্যেও রাজ্য সরকার সব রকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে, ওই পরিবারগুলিকে দ্রুত যাতে ঘরের ব্যবস্থা করা যায়।’’