৪০ বছর আগে পানীয় জল সরবরাহের জন্য বসানো হয়েছিল পাইপলাইন। এত বছর ধরে জল সরবরাহ হলেও ওই পাইপ লাইনের কোনও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। আর তার ফলেই এখন সমস্যায় পড়েছেন হলদিয়ার বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজারের আবাসনের বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই জলের কল খুললে নোংরা জল বেরোচ্ছে। যা পান করা তো দূর, ব্যবহারেরও অযোগ্য। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বহু জায়গায় পাইপ ফেটে নর্দমার জল ঢুকছে। আর তাই জলে দুর্গন্ধ। মুখে দিলে গা গুলোচ্ছে। বমি এসে যাচ্ছে। আবাসিকদের অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। হলদিয়া পুরসভার প্রশাসক পূর্ণেন্দু নস্করকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু সমাধানের কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কারখানার এই আবাসনে ১৫০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। আবাসনের বাসিন্দা তাপসী মাইতি, তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সকালে জলের কল খুললে জলের সঙ্গে মলের দুর্গন্ধ বেরোয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে জলের নমুনা পাঠানো হয়েছিল কলকাতার একটি পরীক্ষাগারে। জয়ন্ত মিত্র, বিষ্ণু মিত্র প্রমুখ বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই সংস্থার রিপোর্টে জলের নমুনায় মারাত্মক কলিফর্ম জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। পরিমাণও সহনমাত্রার তুলনায় বেশি। ১০০ মিলিলিটার জলে ১০ এর কাছাকাছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের জল পাইপ লাইনে করে এসে জমা হয় সার কারখানার আবাসনের রির্জাভারে। সেখান থেকে পাইপলাইনে জল সরবরাহ করে হয় বাড়ি বাড়ি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই পাইপলাইন প্রায় ৪০ বছরের পুরনো। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় পাইপ ফেটে গিয়েছে। ওই পাইপলাইনের পাশ দিয়েই গিয়েছে নিকাশি নালা। কোনও কোনও জায়গায় সেই নিকাশি নালাও অবরুদ্ধ। আর তার ফলেই নর্দমার জল ফাটা পাইপ লাইন দিয়ে ঢুকে পড়ছে।
আবাসিকদের অভিযোগ, সার কারখানার বাসিন্দাদের লিজ নবীকরণের সময় পানীয় জল সরবরাহ এবং মেরামতির জন্য টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু আদতে কোনও কাজই হয় না।
কারখানার জেনারেল ম্যানেজার শুভেন্দু গোস্বামী বলেন, ‘‘এলাকায় যে পাইপ লাইনে জল সরবরাহ করা হয় তা ১৯৭৭ সালে তৈরি। ওই পাইপলাইনের আমূল সংস্কার হয়নি। যখন যেমন অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে সেইমতো মেরামত করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই জলের কারণে একাধিক বাসিন্দার অসুস্থ হওয়ার খবর জানা গিয়েছে। তবে কোথা থেকে নর্দমার জল পানীয় জলের পাইপে মিশছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
হলদিয়া পুরসভার প্রশাসক তথা এসডিও পূর্ণেন্দু নস্কর বলেন, ‘‘পানীয় জল দূষণের অভিযোগ পেয়েছি। সমস্যাটি খতিয়ে দেখে অবিলম্বে কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায় দেখা হচ্ছে।’’