প্রতীকী ছবি।
স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিন্তু বন্ধ স্কুল-কলেজ চত্বরেই পাঁশকুড়ার মতো মফঃস্বল শহরে মাদক চক্র মাথা চাড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। অভিযোগ, চেনা পরিচিত নেশার সামগ্রী ছাড়াও সিগারেটের সঙ্গে ব্রাউন সুগারের মতো মাদক মিশিয়ে অল্প বয়সীরা সুখটান দিচ্ছে।
পাঁশকুড়া শহরের কনকপুর, রেল স্টেশন লাগোয়া এলাকা, ওয়ারলেস, পিডব্লিউডি মাঠ, জানা দিঘির মাঠ, বাহারগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বর, নারান্দা জল ট্যাঙ্ক এলাকা চত্বর, পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ চত্বর এলাকায় দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসে যুবকদের আড্ডা। আড্ডার সঙ্গে চলে থাকে ধূমপান। স্থানীয়দের একাংশ এবং পুলিশ সূত্রের খবর, মাদকপাচরকারীরা এই বিশেষ সিগারেটের মধ্যেই ব্রাউন সুগারের মতো নেশার সামগ্রী ভরে তা বিক্রি করছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শহরের বেশ কিছু যুবক বাইরের এলাকায় গিয়ে মাদক বিক্রির চাঁইদের কাছ থেকে কিনে আনছে মাদক। শহরে তা আনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মোটরবাইক ও চার চাকার যান। আবার মোবাইলে যোগাযোগ করে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বিভিন্ন জায়গাতেও মাদক কারবারিদের হাতে ব্রাউন সুগার তুলে দিচ্ছে ওপরের মাথারা। দাবি, পুলিশি নজরদারি এড়াতে মেচগ্রাম থেকে পাঁশকুড়া স্টেশন আসার রাস্তাটি ব্যবহার করে শহরে মধ্যে মাদক আনা হচ্ছে এবং সেগুলি স্থানীয় দোকানদার দেওয়া হচ্ছে। এরপর নামী ব্র্যান্ডের সিগারেটের মধ্যে ব্রাউন সুগার পাউডার ঢুকিয়ে সেগুলি বিক্রি করা হচ্ছে নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কাছে। আর তা দেখে বোঝার জো নেই যে সিগারেটের মধ্যে ব্রাউন সুগার রয়েছে।
এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এক একটি সিগারেটের মূল্য ন্যূনতম ১০০ টাকা। ব্রাউন সুগারের বিভিন্ন ধরনের ভাগ রয়েছে। চড়া নেশার ব্রাউন সুগারের দাম অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে এক একটি সিগারেটের দাম ২০০ থেকে আড়াইশো টাকা পর্যন্ত হয়। এক একজন যুবক দিনে গড়ে ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকারও নেশা করে বলে সূত্রের খবর।
খাতায় কলমে পুরসভা হলেও পাঁশকুড়ায় এখনও সেভাবে নগরায়ণের ছোঁয়া লাগেনি। পাঁশকুড়া বিডিও অফিসের অদূরে রেলব্রিজের নীচে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি নষ্ট অবস্থায় পড়ে। রেলব্রিজ থেকে পাঁশকুড়া লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার ধারে থাকা লাইটগুলিও কেউ বা কারা ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়া, করোনা কালে ১৮ ওয়ার্ড বিশিষ্ট এই শহরে মানুষজনের আনাগোনা কমেছে। এই বিষয়গুলি মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে দাবি। তার তাদের শিকার হচ্ছে উচ্চবিত্ত পরিবারের কম বয়সীরা।
মাদকের রমরমা যে হয়েছে, সেই বিষয়টি জানা রয়েছে পুলিশের। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মদ ও মাদকদ্রব্য বিরোধী কমিটিও। তারা পাঁশকুড়া থানা এবং তমলুকের এসডিপিও-কে এ নিয়ে অভিযোগ করেছে। সংগঠনের আহ্বায়ক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া শহর জুড়ে ব্রাউন সুগারের কারবার রমরমিয়ে চলছে। কম বয়সীরা মাদকে আসক্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের উচিত অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে
অভিযান চালানো।’’
এই প্রসঙ্গে তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশি শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে।’’