ঘরের উপরে ভেঙে পড়েছে গাছ। খেজুরির বীরবন্দরে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে দিঘার উপকূলবর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। যদিও শেষপর্যন্ত জেলায় বুলবুল সে ভাবে থাবা বসাতে না পারলেও ক্ষতি এড়ানো গেল না জেলার উপকূল এলাকায়। কোথাও গাছ ভেঙে পড়ছে। কোথাও ঘর ভেঙে আশ্রয়হীন হলেন মানুষ। চাষেও ক্ষতির পাশাপাশি বাদ গেল না মৃত্যুও।
শনিবার বুলবুল আছড়ে পড়ার কয়েকদিন আগে থেকেই জেলা প্রশাসনের তরফে সকলকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু উপকূল এলাকায় তেমন তাণ্ডব না হলেও ঝোড়ো হাওয়া আর টানা বৃষ্টি শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত উপকূল এলাকা-সহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছপালা, ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও ধান, পান, ফুল চাষে ক্ষতির চিহ্ন রেখে গিয়েছে। ঝড়বৃষ্টির দাপটে গাছ ভেঙে বাড়ির উপর পড়ার জেরে নন্দীগ্রামের খোদামবাড়ি এলাকায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, জেলায় ১২৫০টির মতো কাঁচাবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে চাষেও। কাঁথি-১ ও ২, দেশপ্রাণ, খেজুরি-১ ও ২ ব্লকে, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ক্ষতির পরিমাণ সবেচেয়ে বেশি। উপকূলবর্তী রামনগর-১ ও ২ ব্লকে সেই অর্থে কোনও ক্ষতি হয়নি বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
নন্দীগ্রামের নদী তীরবর্তী কেন্দেমারি, কালীচরণপুর, নাকচর সহ অন্যান্য গ্রামগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনশোরও বেশি কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে। বহু রাস্তায় ভেঙে পড়েছে গাছ। রবিবার সকালে এলাকা পরিদর্শনে যান জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। প্রশাসন পাশে রয়েছে বলে স্থানীয় মানুষকে আশ্বাস দেন তিনি। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত নন্দীগ্রাম থেকে কোনও অঞ্চলে খেয়া পরিষেবা চালু হয়নি।
ঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২২ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরানো হয়েছিল। তবে রবিবার সকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটায় ত্রাণশিবির থেকে অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।
ঘরবাড়ি ও চাষের ক্ষতির পাশাপাশি জেলার বহু এলাকা রবিবার বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে। দিঘা শহর ছাড়া অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে কাঁথি, রামনগর, খেজুরি, ময়না ও নন্দকুমার ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। জেলা বিদ্যুৎ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৮০০র বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। বহু জায়গায় তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। কাঁথি মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ও হলদিয়া মহকুমার নন্দীগ্রাম এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ভালরকম ক্ষতি হয়েছে। মহিষাদলের বেশ কিছু অঞ্চলে হাওয়ার তোড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ফলে নাজেহাল হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
শনিবার ভোররাত থেকে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা বিদ্যুৎলাইনের মেরামতির কাজ চালিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক করেছেন।
হলদিয়ার ২৫ এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাছ ভেঙে পড়ে সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষন বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে টাউনশিপ এলাকা। সুতাহাটা ব্লকেরও বেশ কয়েকটি জায়গায় কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে।
হলদিয়া বন্দরের কাজ রবিবার সকাল শুরু হলেও বন্দরে জাহাজ চলাচল শুরু হয় বিকেল পাঁচটার পর। মহিষাদলের কাপাসবেড়িয়ায় সীমা বাঁধের কাছে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে গাছ পড়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে ইট মগরা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রামকৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে গাছ কেটে সরিয়ে দেন। ফের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বুলবুলের প্রভাবে নয়াচর এলাকায় প্রায় ১০০ টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি গেস্টহাউস ও থানাতে প্রায় ৫০০ জন দুর্গতকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির জেরে জেলার কাঁথি, রামনগর, খেজুরি ও নন্দীগ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন ব্লক থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’