‘নিবেদিতা’র প্রচার। নিজস্ব চিত্র
খামতি ছিল না প্রচারে। ঘটা করে হয়েছিল উদ্বোধন। কিন্তু সব উদ্যোগই ‘জলে’।
উদ্বোধনের কয়েক মাস পরেও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের ডাকে ভেসেলে করে নদী ভ্রমণে সাড়া দিলেন না কেউই। ‘এমভি নিবেদিতা’ থেকে গেল দ্বীপান্তরেই।
শিল্প শহর হলদিয়া নদীতে ঘেরা। নদীবক্ষে পর্যটকদের ভ্রমণ এবং অর্থ উপার্জনের জন্য একটি ভেসেল ভাড়ায় দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল প্রশাসন। সেই মতো রাজ্যের ভূতল পরিবহণ নিগমের তরফে ‘এমভি নিবেদিতা’ নামে একটি ভেসেল দেওয়া হয়েছিল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদকে (এইচডিএ) গত বছর নভেম্বরে ঘটা করে ভেসেলটির উদ্বোধন হয়েছিল। শীতের পিকনিকের মরসুমে ১৫ ডিসেম্বর থেকে জনসাধারণের জন্য চালু হয়েছিল ওই ভেসেল পরিষেবা। উদ্বোধনের পর মাস তিনেক কেটে গেলেও একটিও ভাড়া পায়নি ‘এমভি নিবেদিতা’।
হলদিয়ায় একাধিক শিল্প সংস্থা রয়েছে। তাই আশা ছিল, সারা বছরে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে ভেসেলটি ভাড়া নিতে পারবেন শিল্প সংস্থার কর্মকর্তারা। একই ভাবে সাধারণ মানুষও ভেসেল ভাড়া করে নদীর বুকে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের তরফে শহর জুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। প্রচারে হয়েছিল সমাজ মাধ্যমেও। তাতে জানানো হয়েছিল, দু’ঘণ্টার জন্য ভেসেলের ভাড়া লাগবে ৮ হাজার টাকা এবং যাত্রী সংখ্যা হবে ৩০ জন। পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য বাড়তি চার হাজার টাকা দিতে হবে। ৩০ জনের অতিরিক্ত যাত্রী নিলে মাথাপিছু ১৫০ টাকা করে দিতে হবে। ভেসেলে মোট ৬০জন যাত্রী চড়তে পারবেন।
এইচডিএ’র কোনও প্রচারই অবশ্য কাজে লাগেনি। ভেসেলটি প্রথমে গেঁওখালিতে রাখা হয়েছিল। পরে কিছুদিনের জন্য সেটি কুকড়াহাটিতে আনা হয়। সেখান থেকে আবার ভেসেলটি নিয়ে যাওয়া হয় হলদিয়া টাউনশিপের জেটিতে। বর্তমানে নিবেদিতার স্থান হয়েছে রায়চকে।
কেন এমন অবস্থা?
হলদিয়াবাসীর একাংশের বক্তব্য, ভেসেলের ভাড়া অনেক বেশি হওয়ায় তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। গোটা ভেসেল ভাড়ার বদলে যদি মাথা পিছু টিকিট কেটে নদীবক্ষ ভ্রমণের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে হয়তো আমজনতা আকর্ষিত হতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলদিয়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ছোট পরিবারের এত বড় ভেসেল দরকার নেই। নদীতে ঘোরার সাধ সবারই থাকে। কিন্তু এত বড় ভেসেল নিয়ে করবটা কী?’’
বর্তমানে ভেসেলটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের পরিকল্পনা ছিল, গেঁওখালি, কুঁকড়াহাটি, নয়াচর সহ একাধিক জায়গা নদীর বুকে ঘুরিয়ে দেখানো হবে এই ভেসেলে করে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে ভূতল পরিবহণ নিগমকে এই ভেসেলের জন্য প্রতি মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা। এইচডিএ সূত্রের খবর, ভাড়া না হওয়ায় ওই টাকা এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ভূতল পরিবহণ নিগমকে।
অবশ্য এখনই আশা ছাড়ছেন না পর্ষদের কর্মকর্তারা। এইচডিএ’র সিইও হরিশঙ্কর পানিক্কর বলেন, ‘‘আশা করছি সাড়া পাব। এখন পরীক্ষার মরসুম চলছে। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আশা করছি মানুষ ভেসেল ভাড়া নেবেন।’’