Fair Price of Potatoes

ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রি শুরু

জেলায় আলুর উৎপাদন বেশি, তারমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর অন্যতম। তবে এই জেলাতেই আলুর দামে এখনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অনুযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৭
Share:

ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রি। নিজস্ব চিত্র।

আলুর কালোবাজারি ঠেকাতে ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রি শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরে। সরকারি উদ্যোগে চালু বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ২৫-২৭ টাকা কিলো দরে মিলছে আলু। ‘সুফল বাংলা’ বিপণি থেকে ২৫ টাকা কিলো দরে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বিপণি থেকে ২৭ টাকা কিলো দরে মিলছে আলু। বুধবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সহায়কমূল্যে এই দরেই আলু বিক্রি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আশা, এর ফলে শীঘ্রই খোলাবাজারে আলুর দাম কমবে।

Advertisement

যে সব জেলায় আলুর উৎপাদন বেশি, তারমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর অন্যতম। তবে এই জেলাতেই আলুর দামে এখনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অনুযোগ। ৩২-৩৫ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি হচ্ছে খোলাবাজারে। কোথাও কোথাও আরও বেশি! আলুর কালোবাজারি ঠেকাতে সম্প্রতি জেলায় এক বৈঠক হয়েছে। ছিলেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি, অতিরিক্ত জেলাশাসক গোবিন্দ হালদার প্রমুখ। এরপরই ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে জেলায়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠী দ্বারা সহায়ক মূল্যে আলু বিক্রয় কেন্দ্র জেলার বিভিন্ন ব্লকেই চালু হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের পরামর্শে কিছু দোকান খুলেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। ওই গোষ্ঠীগুলি ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পের অধীনে রয়েছে। ন্যায্যমূল্যের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে আলু মিলছে কেজি প্রতি ২৫-২৭ টাকা দরে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সব পুর এলাকা, ব্লকে ন্যায্যমূল্যের আলু বিক্রয় কেন্দ্র চালু রাখার কথা জানানো হয়েছে। ব্লকপিছু অন্তত একটি করে বিক্রয় কেন্দ্র চালুর কথা বলা হয়েছে।

আলু যাতে ভিন্ রাজ্যে না যায়, সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ওড়িশা সীমানায় নজরদারি রয়েছে। নজরদারি কেমন চলছে, তা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছিলেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। বেচারাম বলেছেন, ‘‘এখন অন্যত্র আলু পাঠানো যাবে না। প্রয়োজন মিটিয়ে বেশি থাকলে তখন বাইরে পাঠাব। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে বিভিন্ন রকম ভাবে অন্য জায়গায় আলু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেকিং চলছে। চেকিংয়ে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি।’’

Advertisement

রাজ্যে এখন আলু মজুত রয়েছে ৬ লক্ষ ২ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিপণন মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টির জন্য আলু চাষ ১৫ দিন পিছিয়ে গিয়েছে। নতুন আলু পেতে ১০-১৫ জানুয়ারি হবে। রাজ্যে প্রতিদিন আলুর খরচ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। তবে ডিসেম্বরে যেহেতু কাঁচা আনাজ বাজারে থাকে, সেহেতু এই সময়ে আলু খরচ হয় ১৫ হাজার মেট্রিক টন। যে পুরনো আলু রয়েছে, সেটা আরও ৪০-৪৫ দিন চালাতে হবে। রাজ্যের মানুষের যাতে প্রয়োজন মেটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

সরকার যেখানে আপাতত ন্যায্যমূল্য বেঁধেছে কেজি প্রতি ২৫ টাকা, সেখানে জেলার খোলাবাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি কোথাও ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, কোথাও ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে। আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট উঠেছে। তবে আলুর দাম কমার লক্ষণ নেই। মাস খানেক ধরেই আনাজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আলুর দামও তাই-ই। অথচ, পশ্চিম মেদিনীপুরে আলু চাষ কম হয় না। এই জেলায় বছরে আলুর চাহিদা থাকে কমবেশি ২ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখানে জেলার হিমঘরে মজুত ছিল প্রায় ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। এখন রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। আলু ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, মাঠ থেকে আলু হিমঘরে যাওয়ার সময়ে বাজারে দাম ছিল কেজি প্রতি ১৬- ১৮ টাকা।

তাহলে বাজারে আলুর দাম এত চড়া কেন? প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতার দাবি, ‘‘পাইকারি বাজারে দাম ঠিকই রয়েছে। হিমঘর থেকে বেরোচ্ছে প্রায় ২৪ টাকা কিলো দরে। খুচরো বাজারে দাম খানিক বেশি।’’ হিমঘর থেকে বেরোনোর পরে একাধিক আড়ত ঘুরে খুচরো বাজারে পৌঁছয় আলু। অভিযোগ, এক শ্রেণির আড়তদার অতিরিক্ত মুনাফা লুটছেন। একাংশ আলু ব্যবসায়ীর মতে, খুচরো বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি ২৮ টাকা হওয়া উচিত। এর বেশি নয়। অনুযোগ, কেউ কেউ অতিরিক্ত মুনাফা লুটছেন, তাই খুচরো বাজারে কোথাও কোথাও আলু ৩৫- ৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

মেদিনীপুরেও ‘সুফল বাংলা’ বিপণি থেকে ২৫ টাকা কিলো দরে আলু মিলছে। পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ন্যায্যমূল্যে আলু পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মানুষ খুবই খুশি। আলু প্রতিদিনই মানুষের প্রয়োজন হয়।’’ আলু বিক্রির ক্ষেত্রে সব নিয়মনীতি মানা হচ্ছে কি না, কোথাও কোনও সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না, সে সব দিকেও নজরদারি রাখা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement