সময়মতো স্কুল খোলাই শুধু নয়, ঠিক সময়ে স্কুলে না এলেও শিক্ষকদের জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে দেরির কারণ কিংবা কেন সময়ে স্কুল খোলা হয়নি। এমনই পদক্ষেপ করতে চলেছে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত’র নির্দেশেই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। গত শুক্রবার আচমকা বিনপুর-১ চক্রের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। কয়েকটি স্কুলে গিয়ে তিনি দেখেন, পড়ুয়ারা হাজির হলেও তখনও কোনও শিক্ষক স্কুলে এসে পৌঁছননি। আবার একটি স্কুল খোলাই হয়নি। সব দেখে শুনে অত্যন্ত বিরক্ত বিশ্বজিৎবাবু ‘ফাঁকিবাজি’ রুখতে শিক্ষকদের জবাবদিহি চাওয়ার জন্য বিনপুর-১ চক্রের ভারপ্রাপ্ত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষকমহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। যদিও শাসকদলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন বিশ্বজিৎবাবুর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
মাস খানেক হল চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু। তারপরই ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন স্কুলগুলি পরিদর্শন শুরু করেছেন তিনি। শুক্রবার লালগড়ে যাওয়ার সময় রাস্তার ধারে কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে আচমকা ঢুকে পড়েন পরিদর্শক। বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, ‘‘শিশুদের মধ্যে শিক্ষার ভিত তৈরির কারিগর হলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। তাই তাঁদের সময়মতো স্কুলে এসে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। জেলার বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুলকে আদর্শ স্কুলে পরিণত করেছেন সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সুতরাং চেষ্টা ও আন্তরিকতা থাকলে সকলেই ভাল কাজ করতে পারবেন। অহেতুক ফাঁকি দিলে তা বরদাস্ত করা হবে না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ সময়মতো স্কুলে আসেন না। অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুল খোলা হয় না। কোথাও আবার ব্যক্তিগত কাজে শিক্ষকেরা দীর্ঘ ছুটি নেওয়ায় পঠনপাঠনে সমস্যা হয়। বিনপুর-১ চক্রের ভারপ্রাপ্ত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআই) প্রকাশ নাথ বলেন, “যথাসময়ে স্কুলে না এলে শিক্ষকদের ডেকে সতর্ক করা হবে। কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বিনপুর-১ চক্রের সভাপতি মণিকাঞ্চন পাত্র বলেন, “ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু দিনের পর দিন দেরি করে স্কুলে আসাটা ঠিক নয়। চেয়ারম্যান যা করছেন সেটা শিক্ষার উৎকর্ষতার জন্যই।” বাম প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ‘এবিপিটিএ’-এর ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক বিপদভঞ্জন দুলে বলেন, “শিক্ষকেরা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। তাঁদের সময়মতো স্কুলে আসতে হবে। তবে অহেতুক শিক্ষকদের দোষারোপ করা হলে আমরা তার প্রতিবাদ জানাব।”