মহার্ঘ ভাতার দাবীতে প্রতিবাদ। — ফাইল চিত্র।
গত ১০ মার্চ ডিএ’র দাবিতে স্কুলে না আসার ‘অপরাধে’ এক শিক্ষককে কার্যত ‘একঘরে’ করে রাখার অভিযোগ উঠল স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পরদিন অর্থাৎ ১১ মার্চ স্কুলের হাজিরা খাতায় সই করা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত বলে খবর। পরে সই-সমস্যা মিটলেও ওই শিক্ষককে নাকি উচ্চ মাধ্যমিক, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ডিউটি-সহ স্কুলের কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না— অভিযোগ এমনই। শিক্ষকদের একাংশ তথা স্কুল পরিচালক মণ্ডলীর লোকজনও তাঁকে এড়িয়ে চলছেন বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ওই শিক্ষক শিক্ষা দফতর-সহ যৌথ সংগ্রামী মঞ্চে আবেদন জানিয়েছেন বলে খবর। দাসপুরের বরুণা সৎসঙ্ঘ হাইস্কুলের ওই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়েছে। প্রশাসনিক ভাবে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। ঘাটালের অতিরিক্ত জেলা স্কুল পরিদর্শক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “এ ধরনের একটা অভিযোগ এসেছে। খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।” দাসপুরের বরুণা হাইস্কুলের দর্শনশাস্ত্রের শিক্ষক অষ্টম বেরা ১০ মার্চ ধর্মঘটে শামিল হওয়ায় স্কুলে আসেননি। সেই থেকেই গোলমাল শুরু। অষ্টমবাবু ছাড়া ওই দিন বরুণা হাইস্কুলের বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা হাজির ছিলেন।
অষ্টমবাবুর অভিযোগ, “আমি স্কুলে লিখিত ভাবে জানিয়ে ছুটি নিয়েছিলাম। কিন্তু পরদিন স্কুলে এলে আমাকে সই করতে দেওয়া হয়নি। ওই সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। সহকারী প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। আমি বিষয়টি সংগঠনকে জানাই। পরে লিখিত ভাবে জমা দিই। তারপর সই করতে দেওয়া হয়।” অষ্টমবাবুর আরও অভিযোগ, “সই করতে দেওয়া হলেও মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে। পরীক্ষার ডিউটি দেওয়া হচ্ছে না। অন্য কোনও কাজ করতেও দেওয়া হচ্ছে না। সকলেই এড়িয়ে চলছেন। স্কুলে এসে বসে থেকে বাড়ি চলে যাচ্ছি।”
শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংবা সভাপতি একজন সহ-শিক্ষককে কোনও ক্লাস অথবা পরীক্ষার ডিউটিতে যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে শিক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।” যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই শিক্ষক সঠিক কথা বলছেন না। পরদিন স্কুলে এসে ঠিকঠাক ভাবেই সই করেছেন। অনেক আগে থেকেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলে শিক্ষা বিরোধী নানা অভিযোগ রয়েছে। সময়ে স্কুলে না আসা, দায়িত্ব পালন না করা ইত্যাদি। বরুণা সৎসঙ্গ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের নেতা। সুজিতবাবু বলেন, “ওই শিক্ষক মিথ্যা কথা চাউর করে সকলকে বিভ্রান্ত করছেন। সই করতে দেওয়া নিয়ে কোনও ঝামেলা হয়নি। উনি ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে স্কুলকে আগাম জানাননি। তাই কেন আসেননি, জানতে চাওয়া হয়েছিল।’’ সুজিতবাবু আরও জুড়ছেন, “একঘরে করে রাখার অভিযোগও ঠিক নয়। এখন ক্লাস বন্ধ। পরীক্ষা চলছে। তা ছাড়া ওঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েক মাস ধরেই স্কুল বিরোধী নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। মণ্ডলীর লোকজন তাঁর খোঁজখবর করছেন।”