পড়ে রয়েছে কাটা শাল গাছ। নিজস্ব চিত্র
ফের উন্নয়নের বলি হল শালগাছ!
ঝাড়গ্রামের নতুন পুলিশ মর্গ তৈরির জন্য জেলার সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর লাগোয়া জেলা হাসপাতাল চত্বরের ৫টি বড় শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এমন ঘটনায় সরব হয়েছেন পরিবেশ কর্মীরা। ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল চত্বরে এখন যে পুলিশ মর্গটি রয়েছে, সেটিতে বাতানুকূল ব্যবস্থা নেই। সুপার স্পেশালিটি ভবনের কাছে রয়েছে সেই মর্গটি। রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা প্রায়ই দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল লাগোয়া পথচলতি লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, মাঝে-মাঝেই মর্গ থেকে মৃতদেহের পচা দুর্গন্ধ ছড়ানোয় অসহনীয় অবস্থা হয়।
সমস্যা মেটাতে গত বছর জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে অত্যাধুনিক বাতানুকুল মর্গ তৈরির জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছর ডিসেম্বরে নতুন বাতানুকুল মর্গ তৈরির জন্য ৯৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তার জন্য হাসপাতাল চত্বরের ২,৫৮০ বর্গফুট এলাকা চিহ্নিত করা হয়। পূর্ত দফতর টেন্ডার ডাকে। গত অগস্টে ঠিকাদারকে কাজের বরাতও দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ শুরুর প্রয়োজনীয় অনুমতি মিললেও কাজটি শুরু হয়নি।
সূত্রের খবর, যেখানে নতুন মর্গটি তৈরি হবে, সেখানেই বহু পুরনো একাধিক শালগাছ থাকায় সেগুলি কাটার প্রয়োজন হয়। তার জন্য বন দফতরের তরফে প্রয়োজনীয় অনুমতি পেতেই বিলম্ব হয়। অবশেষে বন দফতর গাছ কাটার ছাড়পত্র দেওয়ার পরে সম্প্রতি পাঁচটি শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
সোমবার সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর লাগোয়া প্রস্তাবিত মর্গের নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দেখা গেল সদ্য কাটা মোটা শালগাছের একাধিক গুঁড়ি পড়ে রয়েছে। পূর্ত দফতরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘গাছের জন্য কাজ আটকে ছিল। দু’তিন দিনের মধ্যে নতুন মর্গ তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি জানান, সব দিক খতিয়ে দেখেই গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিকল্প জায়গায় দ্বিগুণ গাছ লাগানো হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে মর্গ থাকলে সুবিধা হয়। সেই কারণে হাসপাতাল চত্বরে প্রকল্পটি রূপায়িত হচ্ছে। বিকল্প জায়গায় গাছ রোপণ করা হবে।’’
তবে প্রশাসনের আশ্বাসে অবশ্য ক্ষোভ কমছে না পরিবেশ কর্মীদের। বাম আমলে নয়ের দশকে তৎকালীন ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালের সম্প্রসারণের জন্য একাধিক শালগাছ কাটা হয়েছিল। ওই সময়ে সরব হয়েছিলেন প্রয়াত পরিবেশ কর্মী বিজন ষড়ঙ্গী। কয়েক বছর আগে নার্সিং ট্রেনিং স্কুল তৈরির জন্যও হাসপাতাল চত্বরের অসংখ্য শালগাছ কাটা পড়ে। পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ, সরকারি নথিতে বিকল্প গাছ রোপণের কথা বলা হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তা হয় না। এভাবেই জঙ্গল সাফ করে দিয়ে নতুন পুলিশ লাইন হয়েছে। কয়েকশো শালগাছ কেটে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের সম্প্রসারণ হয়েছে।
ঝাড়গ্রামের পরিবেশ কর্মী সৌরভ মুদলি বলেন, ‘‘দূরে কোথায় ফাঁকা জায়গায় মর্গটি করা হলে এভাবে পুরনো শালগাছ কাটার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আবারও সবুজে কোপ দিয়েই নতুন মর্গ তৈরি হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, গত কয়েক বছরে গাছ কাটার বিষয় নিয়ে একাধিক বার আন্দোলন করেছে ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ। প্রশাসনিক মহলে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। উন্নয়নের প্রয়োজনে আর শালগাছ কাটা হবে না বলে গত জুনে আশ্বাসও দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেটা রাখা হল না। ফের গাছ কেটেই সরকারি নির্মাণ হচ্ছে। তাই বিকল্প জায়গায় দ্বিগুণ গাছ লাগানোর বিষয়টিও শুধুই আশ্বাস হয়েই থাকার সম্ভবনাই বেশি।