মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, মেয়েদের কথা কেউ ভাবেননি। তাঁদের দিদি ভেবেছেন। কিন্তু বিরোধী প্রার্থীর দাবি, তৃণমূল যতদিন থাকবে ততদিন আর জি করের মতো ঘটনা ঘটবে। আগামী বুধবার মেদিনীপুরে বিধানসভার উপনির্বাচন। এ দিন ছিল ভোটের আগে শেষ রবিবার। সকাল সকাল রবিবাসরীয় প্রচারে বেরিয়ে পড়েছিলেন প্রার্থীরা। আশ্বাসের ফুলঝুরির সঙ্গে ছিল পরস্পরের প্রতি অভিযোগ। কোনও বিরোধী প্রার্থী জোর দিয়েছেন মানুষের অভাব-অভিযোগেই।
কর্ণগড়-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচার সেরেছেন তৃণমূল প্রার্থী সুজয় হাজরা। সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়। পথসভায় সুজয় বলেন, ‘‘আপনারা দিদির পাশে থাকুন। দিদির পাশে থাকা মানে সুখে থাকা। দিদি থাকলে সবার শান্তি। সবার উন্নয়ন।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘বিপদের বন্ধু হিসাবে পাশে থাকব। মেদিনীপুরে হাসপাতালের পাশেই আমার অফিস। সমস্যা, অসুবিধা হলে, আমার অফিসে চলে যাবেন।’’
আর জি কর কাণ্ডে তৃণমূলকে বিঁধছে বিরোধীরা। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী শুনিয়েছেন, ‘‘মেয়েদের কথা কেউ ভাবেনি, কেউ চিন্তা করেনি। আমাদের দিদি ভেবেছে, চিন্তা করেছে। দিদি মহিলাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। দিদি থাকা মানে আমাদের সবার ভাল।’’ আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘‘আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই। মাসে অন্তত একবার করে আসব। চা খাব।’’
প্রচারপর্বের শেষবেলায় মেদিনীপুরে দেখা গেল তৃণমূল সাংসদ জুন মালিয়াকে। জুনের ব্যাখ্যা, ‘‘সুজয়ের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণার পর আমি এসেছিলাম। দলের বিজয়া সম্মিলনীতে। মাঝে আমাকে নৈহাটিতেও যেতে হয়েছে। লোকসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক থাকে, সেখানে যেতে হয়েছে। সুজয়ই আমাকে বলেছিল, দিদি, আপনি শেষের দিকে এলে ভাল হয়। আসলে হাওয়াটা তো শেষের দিকেই তুলতে হবে।’’ তৃণমূল সাংসদের দাবি, ‘‘(উপনির্বাচনের) ছ’টার ছ’টাতেই আমরা গোল দেব।’’
মেদিনীপুরের বিধায়ক পদে জুন ইস্তফা দেওয়ায় এখানে উপনির্বাচন হচ্ছে। জুন বলছিলেন, ‘‘বিধায়ক হিসেবে তিন বছর মেদিনীপুরের উন্নয়ন যতটুকু পেরেছি, করেছি। মানুষের পাশে থেকেছি। মেদিনীপুরের মানুষ আগে বিধানসভায় পাঠিয়েছিলেন। এ বার লোকসভায় পাঠিয়েছেন। আশা করব, সুজয়ও মানুষের পাশে থাকবে। ভাল কাজ করবে। মেদিনীপুর আমাকে অনেক ভালবাসা দিয়েছে। সুজয়কেও একই রকম ভালবাসা দেবে।’’
গোবরু-সহ কয়েকটি এলাকায় প্রচার সেরেছেন কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল ঘোষ। শ্যামল বলছেন, ‘‘গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে গ্রাম, একের পর এক এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। গ্রামে প্রচারটা বেশি হয়েছে। তৃণমূল কাটমানির দল। শহরে পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে দিয়েছে। তাতে আমাদের পতাকা, ফেস্টুন চাপা পড়ে গিয়েছে! আমরা মানুষের দরবারে গিয়ে প্রচার করেছি। মানুষ পরিবর্তন চাইছেন।’’ শ্যামল বলছিলেন, ‘‘এ দিন যখন ধোবাশোলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, বিশাল বড় প্যান্ডেল দেখলাম (তৃণমূলের)। খাওয়াদাওয়ার আয়োজন দেখলাম। মাংস, ভাত খাওয়ানো হচ্ছিল। দেখে আমাদেরও ডাকছিলেন ওরা।’’ শ্যামলের প্রশ্ন, ‘‘উৎসবের মেজাজে আপনারা ভোট করছেন, মাংস-ভাত খাইয়ে। এটা কেন, এটার প্রয়োজন কিসের?’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওরা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করে। মানুষ নীরবে ভোট দেবেন আমাদের।’’
বাম প্রার্থী মণিকুন্তল খামরই বলছেন, ‘‘প্রচার ভালই চলছে। মানুষের সাড়া পাচ্ছি। নানা বিষয় নিয়েই মানুষের কাছে যাচ্ছি। একশো দিনের কাজ নেই। যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা মজুরি পাননি। গরিব মানুষ আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছেন না। পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে গ্রামে। ফসলের দাম নেই। এ রকম নানা বিষয়ই মানুষের কাছে তুলে ধরছি।’’
কাশীজোড়া, গড়মাল-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেছেন বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ তৃণমূলের প্রতি ক্ষুব্ধ। মানুষ বিজেপিকে চাইছে।’’ আর জি কর কাণ্ডই তাঁদের প্রধান ‘অস্ত্র’, এ দিনও স্পষ্ট করেছেন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর কথায়, ‘‘মা, বোন, দিদি, বাচ্চা মেয়ে, কেউই সুরক্ষিত নয় এই বাংলায়। ধর্ষিত হচ্ছে, খুন হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছি আমরা? মায়েরাই বলছে, তৃণমূলকে আর চাই না। তৃণমূলকে উৎখাতের সূচনা মেদিনীপুর থেকেই হবে। মেদিনীপুরের মাটি, আন্দোলনের মাটি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল যতদিন থাকবে, ততদিন আর জি কর ঘটবে!’’