স্কুলে শ্রাদ্ধের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। —নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে পঠনপাঠন চলছে। এক দিকে চলছে খাওয়া-দাওয়া। না, মিড ডে মিল নয়। স্কুলের মধ্যে এক ব্যক্তির শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন হল। তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই প্রধানশিক্ষক জানালেন, মানবিকতার খাতিরে অনুমতি দিয়েছেন। কারণ, যে পরিবারের আত্মীয় বিয়োগে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হল, তাদের নিজেদের কোনও জায়গা নেই। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া থানার গাঁফুলিয়া পশ্চিমপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গাঁফুলিয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা কড়ি দাস নামে অশীতিপর এক বৃদ্ধ সপ্তাহ দুয়েক আগে মারা যান। ঘাটকর্ম, পিণ্ডদান ইত্যাদি আচারের পর মঙ্গলবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের নিয়মভঙ্গের অনুষ্ঠান। মৃতের দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। সকলেই বিবাহিত। ছেলে সনৎ দাস ও সমীর দাস দু’জনেই প্রান্তিক কৃষক। তাঁরা বাবার শ্রাদ্ধের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলেন স্কুলে। প্রায় ৬০০ জন আমন্ত্রিতকে খাওয়ানো হয়েছে।
প্রাথমিক স্কুলটির পড়ুয়া সংখ্যা ১৭২। শিক্ষক-শিক্ষিকা সাত জন। মঙ্গলবার স্কুলের উঠোনে ত্রিপল টাঙিয়ে রান্নাবান্না হচ্ছে দেখে কচিকাঁচারাও খানিক অবাক হয়। স্কুলের মধ্যে ভোজের আয়োজন। পড়াশোনায় আর মন বসে কি? তবে প্রধানশিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডলের দাবি, পড়াশোনা ঠিকঠাকই হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জন্য স্কুলে ছুটি দেওয়া হয়নি। স্কুল চালু ছিল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আসলে এই পাড়ার লোকজন ভীষণ গরিব। ভোজের আয়োজন করার মতো তাঁদের নিজেদের জায়গাও নেই। তাই কোনও অনুষ্ঠান হলে স্কুলের জায়গা ব্যবহারের অনুমতি চান তাঁরা। আমার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। আমি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি দিয়েছি।’’ একই দাবি ওই পরিবারেরও।
মৃতের পুত্র সনৎ দাস বলেন, ‘‘বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করার মতো জায়গা নেই আমাদের। স্কুল ব্যবহারের জন্য মাস্টারমশাইয়ের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। উনি রাজি হওয়ার পর স্কুলে আয়োজন করেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এর আগেও আমাদের স্কুলে অন্য পরিবারের ভোজের অনুষ্ঠান হয়েছে।’’
কিন্তু স্কুলের মধ্যে এমনটা করা যায়? দাঁইহাট চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক পিনাকী ঘোষ এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিষয়টি সঠিক জানা নেই আমার। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’