পটেশ্বরী দুর্গা। নিজস্ব চিত্র
প্রথা মেনে দেবী বোধনের আগেই ‘বোধন’ হয় ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোয়। আজ, বুধবার বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথি। এইদিনই রাজবাড়ি থেকে মঙ্গলঘট আসে কুলদেবী সাবিত্রীর মন্দিরে। মন্দিরের পৃথক গর্ভগৃহে দুর্গাপুজো হয় পটে। এই দুর্গা পটেশ্বরী নামেই খ্যাত। বাঙালির দুর্গাপুজোর বোধন হয় মহাষষ্ঠীতে। বেলবরণও হয় সে দিন। রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর বেলবরণ হয় কৃষ্ণনবমীর আগের দিন জীতাষ্টমী তিথিতে।
মঙ্গলবার জীতাষ্টমী তিথির সন্ধ্যায় সাবিত্রী মন্দিরে বেলবরণ হল নিয়ম মেনেই। রাজ পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু হচ্ছে আজ, বুধবার থেকে। আনুমানিক ১০১৬ বঙ্গাব্দে এই পুজো শুরু হয়েছিল। হিসেব অনুযায়ী, এ বার পুজো ৪১৩তম বর্ষে পড়েছে। রাজবংশের কুলদেবী সাবিত্রীর মন্দিরের ভিতরে রয়েছে চণ্ডীমণ্ডপ। সেখানেই পটে আঁকা ছবিতে হয় দুর্গাপুজো। কুলদেবী সাবিত্রীর নিত্যপুজো হয় দুর্গার ধ্যান-মন্ত্রে। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের জীতাষ্টমী তিথিতে অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে সাবিত্রী মন্দিরে বেলগাছের তলায় মঙ্গলঘট স্থাপন (অধিবাস) করা হয়। জীতাষ্টমীর পরের দিন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে ‘অস্ত্রপূজা’র মাধ্যমে পুজো শুরু হয়।
পুরোহিত পার্থসারথী ঘোষাল বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর বোধন হয় মহষষ্ঠীতে। এই পুজোর বোধন হয় মহাষষ্ঠীর পক্ষকাল আগে কৃষ্ণ নবমীতে। রাজ পরিবার থেকে খড়গ এনে বেলগাছের তলায় নব-পত্রিকা সহকারে পুজো হবে। তারপর অধিবাস করে মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়।’’ তবে দেবীপক্ষের আগে কেন পুজো শুরু, তা নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে গড় ঝাড়গ্রামের জংলি মাল রাজাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে হারিয়ে রাজ্যপাট দখল করেন রাজপুতানার সর্বেশ্বর। তাঁর রাজ্যাভিষেকের দিন, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ইন্দ্রাভিষেক অনুষ্ঠান করা হয়। আরও জনশ্রতি, পরিবারের সমৃদ্ধি ও প্রজাদের মঙ্গল কামনায় জীমূতবাহন, অর্থাৎ ইন্দ্রের পুজো হয়। শক্তিলাভের কামনায় জীতাষ্টমীর পর দিন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে অস্ত্রপূজার মাধ্যমে দুর্গাপুজো শুরু হয়। আবার ষষ্ঠীর দিন রাতে বেলগাছের তলায় মঙ্গলঘট স্থাপন করা হয়। সপ্তমীর দিন সকালে শোভাযাত্রা করে রাজবাড়ি থেকে খড়গ, রাজলক্ষ্মী, শালগ্রাম শিলা ও ঘট মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। দশমীর দিন ‘পাটাবিঁধা’র মাধ্যমে পুজো শেষ হয়। রাজপরিবারের সদস্য বিক্রমাদিত্য মল্লদেব বলেন, ‘‘বিজয়া দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দেবীর পুজো ও চণ্ডীপাঠ, হোম চলবে।’’
বেলবরণের মাধ্যমে গড়বেতার মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ির দুর্গোৎসবও শুরু হয়ে গেল। মঙ্গলবার ছিল জীতাষ্টমী। এ দিন সন্ধ্যায় মঙ্গলাপোতা রাজবাড়িতে দুর্গামণ্ডপের সামনে বেলতলায় ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে বেলবরণ করা হয়। ছিলেন রাজবংশের বর্তমান রাজা অরবিন্দ সিংহদেব।