মুখভার: খাঁচাবন্দি হওয়ার পর। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
খাঁচা থেকে জাল, ঘুমপাড়ানি গুলি থেকে নানা কৌশল— কোনও কিছুতেই বাগে আসেনি সে। শেষে কলা দেখিয়ে ‘বাবা-বাছা’ বলে ডাকতেই গুটিগুটি পায়ে খাঁচায় ঢুকল মহিষাদলের ‘ত্রাস’।
গত তিন মাস ধরে মহিষাদল-নন্দকুমার-তমলুক এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল একটি পোষা বাঁদর। তার হামলায় এখনও পর্যন্ত মহিষাদলেই শতাধিক মানুষ জখম হয়েছেন। কিন্তু বানরটিকে ধরতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছিল বন দফতর। কারণ, বানরটি হলদিয়া থেকে তমলুক এলাকার (প্রায় ৩৩ কিলোমিটার জুড়ে) বিভিন্ন অংশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। শেষে অতিষ্ঠ হয়ে মহিষাদলের মানুষজন সম্প্রতি ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করে বানর ধরার আর্জি জানান। এর পরে আরও উদ্যোগী হয় বন দফতর।
বানর ধরতে মহিষাদলের রথতলা এলাকায় একাধিক খাঁচা পেতেছিল বন দফতর। নন্দকুমারের রেঞ্জার প্রকাশ মাইতি মঙ্গলবার বলেন, ‘‘প্রথমে বানরটির খোঁজ পাই তমলুকের তালপুকুরে। পরে সে চলে আসে মহিষাদলের রথতলা এলাকায়। সেখানে আগে থেকেই খাঁচা বসানো হয়েছিল।’’ তবে ওই খাঁচায় বানরকে জোর করে ঢোকাতে হয়নি বলে জানাচ্ছেন বন কর্মীরা।
বানরটি আগে এক ব্যক্তির পোষা ছিল। পরে তিনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর পরিজনেরা বানরটিকে আঘাত করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। বন কর্মীরা জানাচ্ছেন, পোষা বানর হওয়ার জন্য সে গাছ থেকে ফল বা অন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছিল না। বাড়ির হেঁসেলে ঢুকে খাবার চুরি করত। আর বাধা পেলেই মারমুখি হত। তাই বন্দুক-ঘুমপাড়ানি গুলির বদলে এ দিন খাবারকেই হাতিয়ার করেছিলেন বন কর্মীরা। আর পাকা কলা দেখাতেই বানরটি সুড়সুড় করে নেমে আসে গাছ থেকে। নিশ্চিত মনে এক ডজন কলা খায় সে। পরে বনকর্মীরা খাঁচার ভিতরে আরও খাবার দিতেই, তা খেতে ভিতরে ঢুকে যায় মহিষাদলের ‘ত্রাস’।
বানর খাঁচাবন্দি হওয়ার খবর পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন মহিষাদলবাসী। তাকে দেখতে ভিড় করে বহু উৎসাহী। বানরের কামড় খেয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব শাকিলা বানু, দোলা চক্রবর্তী। দোলারা বলেন, ‘‘বাঁদরটি ধরা পড়ায় আশ্বস্ত হয়েছি।’’ বানর ধরার আর্জি জানিয়ে ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করেছিলেন দীপালি বন্দ্যোপাধ্যায়। দীপালি বলেন, ‘‘বন কর্মীর সক্রিয়তা প্রশংসনীয়। ওঁরা আমাদের বিপদ থেকে বাঁচালেন।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, বানরটিকে উদ্ধার করে হলদিয়ার বালুঘাটায় বন দফতরে নিয়ে আসা হয়। পশু চিকিৎসকেরা তাকে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সে সুস্থই রয়েছে। তবে যতই সুস্থ থাকুক শাখামৃগ, তার খাঁচাবন্দি অবস্থায় মুখ দেখে স্থানীয়েরা বলছেন, ‘‘ত্রাস বাবাজি কিন্তু খুব চটেছেন!’’