ঘাটাল পুর এলাকার বেশিরভাগ নালার হাল এমনই। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
শিলাবতী এক প্রান্ত নিকাশি সমস্যায় নাজেহাল। অন্য প্রান্তে ধ্বস্ত পরিকাঠামো পুনর্গঠন হয়নি এখনও। পুরভোটের আগে পুর-পরিষেবার প্রশ্নে ঘাটালে এই দুই কাঁটাই বিঁধছে শাসক তৃণমূলে।
ভোট এলেই পুর এলাকায় শুরু হয় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। রাস্তাঘাট-সহ সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নে তৎপর হন পুর কর্তৃপক্ষ। সক্রিয় হয় শাসকদলও। ঘাটালবাসীর কাছেও এই দৃশ্য চেনা। তবে এ বার পুরভোটের আগেও উন্নয়নের প্রক্রিয়া এখনও দেখা যায়নি। উল্টে পরিষেবার নিয়ে হাজারো সমস্যা সামনে এলেও ঘাটাল পুরসভা কার্যত নীরব বলে অভিযোগ।
নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন সময় বহু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ বার বারবার বন্যাবেআব্রু করে দিয়ে নিকাশির ফাঁকফোঁকর। বাড়িতে জল ঢুকে চরম সমস্যায় পড়েছেন বহু বাসিন্দা। বন্যাপ্রবণ ঘাটাল পুরসভার পশ্চিম দিকে নিকাশি নালা বলে কিছু নেই। সেখানে বহু পাড়ায় এখনও কাঁচা নর্দমা। পূর্ব পাড়ে কুশপাতা,কোন্নগরে মূল নিকাশি নালাটিও পুরোপুরি অবরুদ্ধ। তার উপর রাস্তা সম্প্রসারণের ফলে নিকাশি নালার বিভিন্ন অংশ বুজে গিয়েছে। এ সবের জেরে হালকা বৃষ্টিতেই কুশপাতা, কোন্নগরের বিভিন্ন পল্লিতে এ বার জল ঢুকেছিল বাড়িতে। এ বার জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরও। এ বার বর্ষার প্রথম থেকেই নিকাশি সমস্যায় জেরবার ঘাটালবাসী। রাস্তা সম্প্রসারণের আগে পুরসভার সঙ্গে পূর্ত দফতরের সমন্বয় না থাকায় সঙ্কট বাড়ে।
বেহাল অন্য পরিষেবাও। তার মধ্যে প্রধান সমস্যা রাস্তার। বন্যায় ঘাটাল পুরসভার ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক মাটির রাস্তা পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। বহু রাস্তার কোনও চিহ্নই নেই। অভিযোগ, শুকচন্দ্রপুরের একাধিক পাড়া, বলরামপুর, নিশ্চিন্দিপুর, সিংহপুর, রামচন্দ্রপুর, গড়প্রতাপনগরে একাধিক মহল্লায় মাটির রাস্তায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। দুর্ঘটনাও হচ্ছে। পুরসভা উদাসীন। বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ঢালাই রাস্তা, কালভার্টের। সেগুলি সংস্কার না হওয়ায় শহরের একটা বড় অংশে যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বন্যায় ঘাটালের আড়গোড়ার সার্কিট বাঁধটিও দফারফা। ওই বাঁধ দিয়ে আড়গোড়া, রঘুনাথচক, শুকচন্দ্রপুর, কিসমত রামচন্দ্রপুর, চাউলি, মনসুকার একাংশ এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। বন্যার পর থেকে বাঁধটি সংস্কার না হওয়ায় ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। বন্যায় বহু জায়গায় জলের পাইপ লাইন ফেটেছিল। জোড়াতাপ্পি দিয়ে সেগুলি সংস্কারের অভিযোগ উঠেছে।
ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট, সিপিএমের ঘাটাল লোকাল কমিটির সম্পাদক চিন্ময় চক্রবর্তীজের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্যা শেষ হলেই উন্নয়ন শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোট এসে গেল। কোথায় গেল সেই প্রতিশ্রুতি!” ঘাটালের পুর-প্রশাসক বিভাস ঘোষের অবশ্য দাবি, “বন্যার পর শহরের বেশকিছু মাটির রাস্তা ও ঢালাই রাস্তা সংস্কার হয়েছে। বাকি রাস্তাগুলির সংস্কারেও পদক্ষেপ হচ্ছে। আর নিকাশির উন্নয়নে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ডিপিআর জমা দেওয়া হয়েছে।” (চলবে)