টোলট্যাক্স এড়াতে গিয়েই দুর্ঘটনা

রাজ্য সড়কে পর পর মৃত্যু নিয়ে আতঙ্ক

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাত ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার জন্য সাইকেল চালিয়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে ফিরছিলেন অলোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০০:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাত্র এক বছর আগে নন্দকুমারের কোলসর বাজারে নিজের দোকানের সামনে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যবসায়ীর। প্রায় একই ভাবে রবিবার রাতে ওই সড়কে নন্দকুমারের শ্রীকৃষ্ণপুর বাজারের কাছে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক ব্যবসায়ীর। অলোক পাল (২৬) নামে ওই যুবকের শ্রীকৃষ্ণপুর বাজারে মুদির দোকান রয়েছে। তাঁর বাড়ি স্থানীয় মান্দারগেছিয়া গ্রামে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাত ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার জন্য সাইকেল চালিয়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে ফিরছিলেন অলোক। সেই সময় হলদিয়া থেকে মেচেদাগামী একটি লরির ধাক্কায় তিনি সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যান রাস্তায়। তাঁর দেহের উপর দিয়েই লরির চাকা চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অলোকর। স্থানীয় লোকজন জড়ো হওয়ার আগেই লরি নিয়ে চালক পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

দুর্ঘটনার জেরে ওই এলাকার ব্যবসায়ী, দোকানদার ও বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, তমলুকের সোনাপেত্যার কাছে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে টোলপ্লাজা রয়েছে। কিন্তু টোল এড়াতে ভারী মালবাহী লরি, তেল-গ্যাস ট্যাঙ্কার, বালি বোঝাই লরি হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে যাতায়াত করে। এতে ওই সব লরি, ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে মৃত্যুও হচ্ছে। গত বছর মার্চ মাসে কোলসর বাজারের ব্যবসায়ী শক্তিপদ দাস রাতে দোকান বন্ধ করার সময় লরির ধাক্কায় মারা যান। ফের একই ভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কোলাঘাটের কাছে হলদিয়া মোড় থেকে মেচেদা হয়ে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার হলদিয়া-মেচেদা ৪১ জাতীয় সড়ক রয়েছে। আবার মেচেদা থেকে তমলুক শহর, নন্দকুমার, মহিষাদল হয়ে হলদিয়াগামী রাজ্য সড়ক রয়েছে সমান্তরালভাবে। শিল্পাঞ্চলের পণ্যবাহী লরি, ট্রেলার, তেল-গ্যাস ট্যাঙ্কারগুলিকে ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় সড়ক ধরে যাতায়াতের সময়ে তমলুকের সোনাপেত্যার কাছে টোলপ্লাজা পার হতে হয়। টোলপ্লাজায় ন্যূনতম ২৪০ টাকা দিতে হয় পণ্যবাহী গাড়িকে। অভিযোগ, দিনের বেলায় ভারী গাড়ি জাতীয় সড়ক ধরে চলাচল করলেও রাত হলেই তাদের বেশিরভাগ টোলপ্লাজা এড়াতে মেচেদার কাছে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে ঢুকে তমলুক শহরের উপর দিয়ে নন্দকুমারের শ্রীধরপুর ঘুরে ফের জাতীয় সড়কে ওঠে। একইভাবে হলদিয়া থেকে মেচেদা যাওয়া গাড়িগুলির একাংশ নন্দকুমারের শ্রীধরপুরে রাজ্য সড়ক ধরে দিয়ে মেচেদায় জাতীয় সড়কে ওঠে। রাত ৮ টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত লরি, ট্যাঙ্কারগুলি রাজ্য সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এর ফলে রাত ৮ টার পর রাজ্য সড়কে যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ।

এদিন রাতে শ্রীকৃষ্ণপুরে মানিকলাল সাউয়ের বাড়ির সামনে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শী মানিকের অভিযোগ, ‘‘রাত আটটার পর থেকে এই সড়কে লরি, ট্যাঙ্কারের দাপটে সাইকেল, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করতে খুবই ভয় লাগে। প্রতিদিন কয়েকশো ভারী লরি এ ভাবে যাতায়াত করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ-প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি।’’

সমস্যার কথা মেনে নিয়ে জেলা পরিবহণ আধিকারিক সজল আধিকারী বলেন, ‘‘টোলপ্লাজা এড়ানোর জন্যই রাজ্য সড়কে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের সঙ্গে শীঘ্রই অভিযান শুরু করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement