রেশন গ্রাহকদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। রবিবার নন্দীগ্রামের সাঁইবাড়ি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
লকডাউন পর্বে দ্বিতীয় দফায় সরকারিভাবে বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী বন্টনের সময় রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে বিক্ষোভের আঁচ শুরু হয়েছিল প্রথম দিন শুক্রবারেই। কোলাঘাটের সিদ্ধা এলাকার এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী কম দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এবং বিডিওকে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। ওই রেশন ডিলারকে শো-কজ করেছে জেলা খাদ্য দফতর। কিন্তু তার পরেও ফের জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোথাও ডিলারের কাছে রেশনের চাল বিক্রি করে টাকা নেওয়া, কোথাও ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ অব্যাহত।
রবিবার নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের সাঁইবাড়ি গ্রামে এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে খাদ্যসামগ্রী বণ্টনের সময়েই ওজনে কারচুপি ও কম পরিমাণের অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। ক্ষুদ্ধ গ্রাহকেরা ওই রেশন দোকানে তালা লাগিয়ে দেন। ডিলারের বাইক ভাঙচুর করে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রীর চেয়ে কম দেওয়া হচ্ছিল ও ওজনে কারচুপি করা হচ্ছিল। রেশন ডিলার ইচ্ছাকৃতভাবে এই কারচুপি করেছেন। ঘটনার জেরে উত্তেজনা তৈরি হয়। খবর পেয়ে নন্দীগ্রাম থানার সিভিক ভলান্টিয়াররা ঘটনাস্থলে যান। উত্তেজনার মাঝেই রেশন ডিলার ও তাঁর কর্মীরা পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। ক্ষুদ্ধ বাসিন্দারা রেশন দোকানে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান। রেশন দোকানের সামনে রাখা দু’টি মোটরসাইকেল পুকুরে ফেলে দেয় জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশবাহিনী যায়। নন্দীগ্রাম ২ এর বিডিও সুরজিৎ রায় জানান, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতেই দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশের একটি রেশন দোকান থেকে রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলার খাদ্য নিয়ামক সৈকত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের সাঁইবাড়ি গ্রামে এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ওই ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে খাদ্য পরিদর্শক গিয়েছিলেন। ওই রেশন ডিলারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’’
এদিকে পাঁশকুড়ায় গ্রাহকদের কাছ থেকে রেশন সামগ্রী কিনে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শ্রেণির রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে। চলতি মাস থেকে রাজ্যের সমস্ত রেশন গ্রাহকদের খাদ্য সামগ্রী বিলির পরিমাণ অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। বিনামূল্যে পাওয়া এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী অনেকেই রেশন ডিলারের কাছে বিক্রি করে টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ এসেছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
পাঁশকুড়ার এক রেশন গ্রাহক বলেন, ‘‘বাড়িতে চাষের ধান থেকে তৈরি চাল আছে। তাই চালের অভাব নেই। এখন রেশনের চাল নিয়ে বাইরে কোথায় বিক্রি করব! রেশন ডিলারকেই চাল দিয়ে তার বদলে টাকা নিয়ে নিচ্ছি।’’ কারও যুক্তি, ‘‘রেশনের চালে ভাত খাওয়া যায় না। তাই চালের বদলে টাকা নিয়ে নেওয়াই ভাল।” শুধু চাল নয়। গম ও আটার ক্ষেত্রেও এই ধরনের বেচা-কেনার অভিযোগ এসেছে।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘বেশ কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে, রেশন সামগ্রী কিনে নিচ্ছেন ডিলাররাই। এই বেআইনি মজুতদারির ফলে আগামী দিনে কৃত্রিম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। খাদ্য দফতরের উচিত বিষয়টিকে কড়া নজরে দেখা।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের খাদ্য নিয়ামক সৈকত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। রেশনের সামগ্রী কোনওভাবে বিক্রি করা যায় না। এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, লকডাউন পর্বে গত এপ্রিল মাসে প্রথম দফায় খাদ্যসামগ্রী বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগে ময়না ও পাঁশকুড়া ব্লকের দুই রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড ও জেলার মোট ১৫ জন রেশন ডিলারকে শো-কজ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় পয়লা মে থেকে খাদ্যসামগ্রী বণ্টন শুরু হওয়ার পর অনিয়মের অভিযোগে গত তিনদিনে জেলায় দুই রেশন ডিলারকে শোকজ করা হয়েছে।