২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এই বছরের মাধ্যমিক। ফাইল চিত্র
জীবনের ওঠাপড়া গায়ে লাগতে পারে। না-ও পারে। তবে মাধ্যমিকের কোনও বিষয়ের লেখচিত্রের ওঠাপড়ায় এখনও আলোড়ন হয়। যেমনটা এ বার হচ্ছে। এক ধাক্কায় অনেকটা কমেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। পশ্চিম মেদিনীপুরেই গতবারের চেয়ে এ বার পরীক্ষার্থী কমেছে ২১,২৭৫ জন। শতাংশের বিচারে ৩৫.৭২ । আর ঝাড়গ্রামে পরীক্ষার্থী কমেছে ৭৬৯১। শতাংশের বিচারে ৪৬.৬।
‘পরীক্ষা পে চর্চা’ করতে গিয়ে সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে যেটা প্রথমে উঠে আসছে তা হল শিক্ষার অধিকার আইনের সফল প্রয়োগ। শিক্ষকদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী এখন শিশুর বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হলে তবে প্রাক প্রাথমিকে ভর্তি করা হয়। আর পড়ুয়ার বয়স দশ বছর পূর্ণ হলে তবে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া যায়। ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সসীমা ন্যূনতম ৬ বছর করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সসীমা ন্যূনতম ১০ বছর করা হয়েছিল। কঠোর ভাবে এই নিয়ম প্রয়োগ হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। পঞ্চম শ্রেণিতে কম পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিল। এরই জেরে এ বার কমেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।
প্রশ্ন উঠছে, করোনার প্রভাবে স্কুলছুটও কি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমার অন্যতম কারণ। সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না শিক্ষকমহলের একাংশ। তবে এক লাফে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এতটা কমে যাওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে করোনার চেয়ে তাঁরা এগিয়ে রাখছেন নিয়মের কঠোর প্রয়োগকেই। ঝাড়গ্রাম শহরের অভিভাবক ভূপেনচন্দ্র মাহাতো বলছেন, ‘‘এবার আমার ছেলে হিমেল মাহাতো মাধ্যমিক দিচ্ছে। হিমেল যেবার পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়, সেই ২০১৭ সালে ভর্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। সেবার দশ বছর পূর্ণ হওয়াদেরই পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল।’’ একাংশ শিক্ষকের স্বীকারোক্তি, ‘‘করোনার কারণে অফলাইন ক্লাসে ছিল প্রতিবন্ধকতা। মাঝপথে পড়াশোনায় ঘাটতি থেকে গিয়েছে অনেক পড়ুয়ারই।’’ স্কুলগুলি থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের পরে বার্ষিক পরীক্ষায় বসেনি একাংশ পড়ুয়া। দশম শ্রেণিতে টেস্ট পরীক্ষায় বসেনি একাংশ পড়ুয়া। আবার টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি একাংশ পড়ুয়া। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমার পিছনে এ সব কারণও রয়েছে। মেদিনীপুর গ্রামীণের গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলের সহ প্রধান শিক্ষক প্রলয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘পড়াশোনার প্রতি কিছু পড়ুয়ার আগ্রহের অভাব দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।’’
স্কুলছুট হওয়ার পিছনে প্রধান দু’টি কারণ এক, মেয়ের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ। দুই, ছেলের ক্ষেত্রে কাজে চলে যাওয়া। স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা হয়নি? কেশপুরের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘চেষ্টা হয়েছে। তাতে সাফল্য মিলেছে নামমাত্র!’’ প্রায় চল্লিশ বছর গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত লালগড়ের পঙ্কজকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘অতিমারী আবহে স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামীণ এলাকার একাংশ পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে। অনেক ছাত্রীর বিয়েও হয়ে গিয়েছে। এটাও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ হতে পারে।’’ ঝাড়গ্রামে এ বারও অবশ্য মাধ্যমিকের মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। জামবনি ব্লকের গিধনী এলোকেশী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা দেবলানী দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘ কন্যাশ্রী প্রকল্পের কারণে প্রান্তিক এলাকার ছাত্রীদের মধ্যে পড়াশোনা করার আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে। তাছাড়াও অভিভাবকদের মধ্যেও মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার বিষয়ে সচেতনাবোধও বেড়েছে। নারী শিক্ষা ও বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচার ও প্রসারও এক্ষেত্রে সচেতনতাবোধ তৈরি করেছে।’’
২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। শেষ হবে ৪ মার্চ। পরীক্ষার্থী কমার সূত্রে পরীক্ষাকেন্দ্র কমেছে দু’জেলায়। শিক্ষামহলের একাংশের বক্তব্য, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমা নিয়ে আশঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এটা সাময়িক বিষয়।
‘অল ইজ ওয়েল’।