—প্রতীকী চিত্র।
প্রকল্পটাই থমকে রয়েছে। অথচ, সেখানে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলছেন জমিদাতাদের একাংশ।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছেই, প্রকল্পই যখন এগোচ্ছে না তখন সেখানে চাকরি পাওয়ার প্রসঙ্গ এখনই উঠছে কেন? প্রকল্পটা যেহেতু রেলের (অর্থাৎ কেন্দ্রের) এবং জায়গাটা নন্দীগ্রাম, ফলে এর পিছনে বিস্তর রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ কাজ করছে বলে অনেকের মত।
দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত ১৮.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকে সম্মান জানাতে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকল্পের সূচনা করেন তিনি। ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, জমিদাতাদের পরিবার-পিছু এক জনের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু মমতা রেলমন্ত্রী পদ ছাড়ার পর প্রকল্প এতটুকুও এগোয়নি।
গত অগস্ট মাসে প্রকল্পের কাজ ঘুরে দেখেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। তিনি বৈঠক করেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। এর পরেই থমকে থাকা এই প্রকল্প নিয়ে আশার আলো দেখেন এলাকার মানুষ।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি মাসের ৬ তারিখ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে বেশ কিছু জমিদাতাকে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। তাতে অনেকের নাম বাদ রয়েছে বলে অভিযোগ। ইতিপূর্বে তাঁরা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের ডিআরএমের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন।
জমিদাতাদের দাবি, গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ করার জন্য পরিবার পিছু এক জনকে ডেকেছিল স্ক্রিনিং কমিটি। শারীরিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য হিসেবে ২৫১ জন জমিদাতার নাম চূড়ান্ত করা হয়। তারা নির্ধারিত সময়সূচি মেনে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষায় হাজির হন। যদিও পরে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আপাতত এই পরীক্ষা স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফের এ বছর ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে বেশ কিছু জন জমিদাতাকে পরীক্ষার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। সেই তালিকায় আগের ২৫১ জনের মধ্যে অনেকের নাম বাদ রয়েছে। এতেই দেখা দেয় ক্ষোভ।
নন্দীগ্রামের বাসিন্দা জয়দেব মণ্ডল, হিমাংশুশেখর মণ্ডলদের কথায়,"শারীরিক দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার জন্য ২৫১ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এখন দেখছি তাঁদের অনেকেই বঞ্চিত। যাতে কেউ বঞ্চিত না হন, তার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি।"
কেন্দ্র এবং রেলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অসম্পূর্ণ দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত রেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। আগামী ২০২৪-২৫ সাল থেকেই ট্রেন চলবে। ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও প্রকল্প আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
ইতিমধ্যে দক্ষিণ- পূর্ব রেলের ডিআরএম ছাড়াও নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, জেলার দুই সাংসদ শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারীকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ১৫ জন জমিদাতা। দিব্যেন্দু অধিকারী বলছেন,"একটা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" যদিও তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের নেতা শেখ সুফিয়ান বলছেন, "পুরোটাই বিজেপি নাটক। বাস্তবে এই প্রকল্প করার হলে অনেক আগেই হয়ে যেত। আগামী বছর লোকসভা ভোট। তাই মানুষকে বোকা বানানোর জন্য তার আগে নতুন করে জমি মাপা হচ্ছে, কাউকে কাউকে চাকরির জন্য ডেকে পাঠানো হচ্ছে। বাস্তবে কিছুই হবে না।"