সন্তানহারা একা মা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
রাস্তার পাশের ফাঁকা মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি কুকুর ছানার নিথর দেহ। শনিবার এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। ঘাটালের মনসুকার বাঘানালা গ্রামের ঘটনা। এলাকায় পৌঁছে জানা গেল ঘটনার সত্যতার কথা। গ্রামের বাসিন্দাদের কারও মতে— মৃতের ছানার সংখ্যাটা ১২, আবার কারও মতে ১৪।
ঘটনার কথা কানে গিয়েছে পুলিশেরও। শনিবার ঘটনাস্থলে তদন্তে যায় ঘাটাল থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘাটালের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে কয়েকটি কুকুর ছানাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে অভিযোগে কারও নামের উল্লেখ নেই। ফলে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার কিংবা আটক করা হয়নি। উল্লেখ্য, গত বছর জানুয়ারিতে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ১৬টি কুকুর ছানাকে পিটিয়ে হত্যা করার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। ঘটনায় নিন্দায় ঝড় উঠেছিল। শনিবার ঘাটাল থানার মনসুকা এলাকার বাঘানালা গ্রামে পৌঁছে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, সকলে এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতেই স্বচ্ছন্দবোধ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর কথায়, “ফসল খেতে উৎপাত ঠেকাতেই বাচ্চাগুলিকে মারা হয়েছে। তবে কে বা কারা করেছে, তা জানি না।”
আবার কারও দাবি, “কুকুরের বাচ্চাগুলি অনেকের বাড়িতে ঢুকে পড়ছিল। কারও খাবারে মুখও দিচ্ছিল। আবার অনেককে আঁচড়ে-কামড়েও দিয়েছিল। সেই কারণেই হয়তো কেউ এমনটা করে থাকতে পারে।” তবে গ্রামের মাটিতে এ ভাবে কয়েকটি প্রাণকে হত্যার ঘটনাকে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। গ্রামের এক মহিলার প্রশ্ন, ‘‘বাচ্চাগুলি তো কারও ক্ষতি করেনি। তা হলে কেন ওদের মারা হল।”
ঠিক কী হয়েছিল? পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রের খবর, ১০-১৫ দিন আগে বাঘানালার কারক পাড়ায় একটি কুকুরের ১২টি মতো বাচ্চা হয়। পাড়ার অন্য একটি কুকুরের বাচ্চা মিলিয়ে এলাকায় মোট ২৪টি কুকুরের বাচ্চা ছিল। জানা যাচ্ছে, কারক পাড়ায় মাঠ লাগোয়া সরু মোরাম রাস্তায় ছোট সিমেন্টের পাইপে ভিতরেই থাকত ১৪টি বাচ্চা। শুক্রবার রাতে বাঘানালার গ্রামেরই কে বা কারা পাইপের ভিতর থেকে বাচ্চাগুলিকে বার করে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। শনিবার সকালেই কুকুর বাচ্চাগুলির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর গ্রামেরই এক যুবক সেই ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে আপলোড করে দেয়। তার তাতেই শোরগোল পড়ে যায় বিভিন্ন মহলে।
শনিবার মৃত বাচ্চাগুলির মা-কে এলাকায় ইতস্তত ঘুরতে দেখে, চোখে জল এসে গিয়েছে স্থানীয় অনেকেরই। তাঁদের কথায়, “এর আগে গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেনি।” ঘাটাল যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষে দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “এ ভাবে কেউ কুকুরকে পিটিয়ে মারতে পারে নাকি? নিন্দার ভাষা নেই। পুলিশ দোষীদের অবিলম্বে খুঁজে বার করুক।” ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দিলীপ মাজি বললেন, “কুকুরকে পিটিয়ে মারার ঘটনা শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।” জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক এই প্রসঙ্গে বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের নাম জানার চেষ্টা চলছে।”