গত ৬ জুন বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক হয়েছিল মেদিনীপুরে। সে বৈঠকেই জানানো হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্প জমা দিতে।
অবশ্য ওই জানানোই সার! জেলার ১৯ জন বিধায়কের মধ্যে প্রকল্প জমা দিয়েছেন মাত্র দু’জন। অগত্যা, ফের বৈঠক ডাকল জেলা প্রশাসন। আজ, শুক্রবার মেদিনীপুরেই এই বৈঠক হবে। থাকবেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক সুমন্ত রায় প্রমুখ।
এই সময়ের মধ্যে যে দু’জন প্রকল্প জমা দিয়েছেন, তাঁরা নতুন বিধায়ক। নারায়ণগড় থেকে নির্বাচিত প্রদ্যোত ঘোষ এবং দাঁতনের বিক্রম প্রধান। প্রদ্যোতবাবু সারা বছরের জন্য বরাদ্দ অর্থেরই প্রকল্প জমা দিয়ে দিয়েছেন। যা দেখে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, “সব বিধায়ক যদি এমন তৎপর হন, তাহলে জেলারই ভাল।”
সরকার গঠনের পরপরই বিধায়ক তহবিলের টাকা পৌঁছে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। প্রত্যেকের তহবিলে আপাতত ৩০ লক্ষ করে টাকা এসেছে। বর্তমানে বিধায়কদের তহবিলে বছরে ৬০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়। এই টাকায় প্রস্তাব অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করে জেলা পরিকল্পনা দফতর।
অভিযোগ, একাংশের বিধায়ক প্রস্তাব জমা দিয়েই হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। প্রস্তাব এবং ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদনের বিষয়েও বিধায়কদেরই উদ্যোগী হওয়ার কথা। কিন্তু অনেকেই করেন না। ফলে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করা যায় না। টাকা পড়ে থাকে।
৬ জুনের বৈঠকে বিধায়কদের সময়ের মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “বিধায়কদের বারবার জানানো হয়েছিল, প্রস্তাবগুলো আইনগত পদ্ধতি মেনে জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বেশিরভাগই তা করেননি। কয়েকজনের তহবিলের কিছু টাকা খরচ করাও সম্ভব হয়নি।” তাঁর আশা, এ বার তেমন হবে না।
বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০০০-০১ অর্থবর্ষে। তখন বছরে ১৫ লক্ষ টাকা পেতেন এক একজন বিধায়ক। পরে তা বেড়ে হয় ২৫ লক্ষ। বাড়তে বাড়তে এখন বছরে ৬০ লক্ষ টাকা।
প্রত্যেক বিধায়কই নিজের এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এই অর্থ দেওয়া যায় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে অর্থ দিলেও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ৮ লক্ষ টাকার বেশি দেওয়া যায় না। সেই সংস্থায় যেন নিজের আত্মীয় না থাকেন তাও দেখতে হয়। আবার কোনও সংস্থাকে অ্যাম্বুল্যান্স দিলে সেই সংস্থা যদি নিয়ম মেনে তা না চালায় তাহলে ১৮ শতাংশ সুদ-সহ টাকা ফেরৎ দিতে হয়। ৫০ হাজার টাকার নীচে কোনও প্রকল্প তৈরি করা যায় না। হাসপাতালের সরঞ্জামও কেনা যেতে পারে এই প্রকল্পে।
এমনকী ২০১৫ সালের নিয়ম অনুযায়ী, জেনারেটরও কেনা যেতে পারে। তবে দেখতে হবে তা যেন সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়। বস্তুত, এই ‘কোটা’র টাকা খরচেও একাংশ বিধায়ক উদাসীন থাকেন বলে অভিযোগ। এলাকা উন্নয়ন তহবিলে বিধায়কদের জন্য বছরে যে ৬০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়, তার ৩০ শতাংশ টাকা খরচ হলেই পরের ধাপের টাকা পেতে পারেন একজন বিধায়ক। কাজের ক্ষেত্রেও অনেক সময় গড়িমসি হয়। খরচের হিসেব জেলায় আসতেও কিছুটা দেরি হয়।
ফলে, খাতায়-কলমে বাস্তবের সঙ্গে হিসেবে ফারাক থেকেই যায়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সব বিধায়ককেই সমান সচেতন হতে হবে। সময়ের মধ্যে যাতে প্রকল্পের প্রস্তাব জমা পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।” শুক্রবারের বৈঠকের পরে ছবিটা বদলায় কি না, সেটাই দেখার!