—প্রতীকী ছবি।
সরকারি কলেজের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর প্রস্তাব ও মেসেজ পাঠানোর অভিযোগ করেছেন তিন ছাত্রী। তবে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় বিস্মিত শিক্ষক-মহলের একাংশ ও পড়ুয়ারা। কারণ, নানা ধরনের কাজে যুক্ত থাকায় পড়ুয়াদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ওই অধ্যাপক।
তিনি কলেজ শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সওয়াল করছেন। কলেজের বেহাল বয়েজ হস্টেলের সদ্য সুপারের দায়িত্ব পেয়ে সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে বার বার তাগাদা দিয়ে অবশেষে বরাদ্দ আদায় করেছেন তিনি। সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। কলেজে সেমিনার থেকে নানা ধরনের শিক্ষামূলক কর্মসূচি ও ভ্রমণের আয়োজন করে পড়ুয়া মহলে বেশ জনপ্রিয় এমন একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
কলকাতার বাসিন্দা ওই অধ্যাপক ঝাড়গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, কলেজে গড়ে আট থেকে দশ ঘণ্টা থাকেন ওই অধ্যাপক। ক্লাস ও ল্যাবরেটরি ক্লাসের বাইরেও কলেজের নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তিনি। ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তিন জন ছাত্রী গত ১৬, ১৭ ও ১৮ জুলাই অভিযোগ করেন। ওই অধ্যাপক যে বিভাগে কাজ করেন, সেই বিভাগের প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন তাঁরা। স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর অভিযোগ, ওই অধ্যাপক কিছুদিন আগে তাঁকে বারবার ভিডিয়ো কল করেছিলেন ও আপত্তিকর মেসেজ পাঠিয়েছেন। স্নাতকোত্তর স্তরের দুই ছাত্রীর অভিযোগ, গত বছর ওই অধ্যাপক তাঁদের ঘাটশিলা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এমন অভিযোগ পেয়ে বিভাগীয় প্রধান অভিযোগপত্র তিনটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য অভিযোগপত্রগুলি কলেজের ‘প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমিটি’র কাছে পাঠিয়ে দেন। মঙ্গলবার ওই কমিটির বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য কলেজের ইন্টারন্যাল কমপ্লায়েন্স কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘তিন ছাত্রীর অভিযোগ খতিয়ে দেখবে কলেজের ইন্টারন্যাল কমপ্লায়েন্স কমিটি। এর বেশি কিছু বলব না।’’
এ দিন কলেজ চত্বরে ওই অধ্যাপক রীতিমতো ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘গত বছর শিক্ষামূলক ভ্রমণে ঘাটশিলা যাওয়ার কথা হয়েছিল। সে কথা কয়েকজন পড়ুয়াকে মেসেজ করে জানিয়েও ছিলাম। কাউকে ভিডিয়ো কল অথবা অশালীন মেসেজ পাঠানোর তো প্রশ্নই ওঠে না।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘বেশ বুঝতে পারছি, সংস্কারপন্থী হতে গিয়ে অজান্তে নিজেরই বিপদ ডেকে এনেছি। আমিও চাই নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। কারণ, কলকাতা ছেড়ে, স্ত্রী সন্তান ছেড়ে এখানে ভাল কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে এসেছি। আমার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উঠবে ভাবতেই পারছি না।’’ এত পরে কেন অভিযোগ? ছাত্রীরা বিভাগীয় প্রধানকে জানিয়েছেন, যাতে কলেজে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না হয়, তাই ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েই তাঁরা অভিযোগ করেছেন।