তৃণমূল কর্মীদের উল্লাস। কনকাবতী পঞ্চায়েতের সামনে। — নিজস্ব চিত্র।
বিরোধীরা নয়। তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী যে তৃণমূল তা স্পষ্ট হল বৃহস্পতিবার গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনেও। কোথাও দলের ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী বোর্ড গঠন করল। কোথাও আবার দলের ঘোষিত প্রধানের নাম শুনেই রাতারাতি বেপাত্তা হয়ে গেলেন তৃণমূলের নবনিবার্চিত একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য। কোরামের অভাবে কেশপুর-সহ একাধিক জায়গায় বোর্ড গঠনই স্থগিত হয়ে গেল।
ঘাটাল ব্লকের আজবনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পদটি মহিলা সংরক্ষিত। সেখানে উপপ্রধান পদ নিয়ে টানাপড়েন চলছিল। ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রাজকুমার ঘোষ উপ প্রধানের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু ভোটে দলবিরোধী কাজ করার অভিযোগ ওঠায় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব প্রধান হিসাবে রিনা ধাড়া এবং উপপ্রধান পদে গোপাল মাইতির নাম ঘোষণা করে। এরপরই বুধবার রাতে রাজকুমার সহ ছ’জন প্রতিনিধি বেপাত্তা হয়ে যান। ১৬ আসনের ওই পঞ্চায়েতে এবার তৃণমূল ১১ এবং বিজেপি ৫ টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের ছ’জন প্রতিনিধি গরহাজির থাকায় তৃণমূলের বাকি সদস্যদের কেউ আর কেউ পঞ্চায়েত মুখো হয়নি। এমনকি, বিজেপির নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরাও আসেননি।
কেশপুরে ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এদিন ৭টিতে বোর্ড গঠনের কথা ছিল। কিন্তু মুগবসান এবং ধলহারায় বোর্ড গঠন হয়নি। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই স্থগিত হয়েছে দুই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাচিত সদস্য উপস্থিত না হওয়ায় ‘কোরাম’ হয়নি। প্রধান- উপপ্রধান কে হবেন, সে নিয়ে দুই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ নিয়ে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরেই না কি নির্দিষ্ট সময়ে সদস্যরা পঞ্চায়েতে উপস্থিত হননি। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, মুগবসানে প্রধান হিসেবে রওসানা খাতুন, উপপ্রধান হিসেবে চন্দনা দেবের নাম দল মনোনীত করেছিল। এখানে পঞ্চায়েত সদস্যের সংখ্যা ২৩। সকলেই তৃণমূলের। ধলহারায় প্রধান হিসেবে শেখ জসিমুদ্দিন আহমেদ, উপপ্রধান হিসেবে তারাপদ দিগারের নাম দল মনোনীত করেছিল। এখানে পঞ্চায়েত সদস্যের সংখ্যা ১৭। সকলেই তৃণমূলের। এই দুই পঞ্চায়েতে দল মনোনীত প্রধান-উপপ্রধানকে মানতে চাইছেন না নির্বাচিত একাংশ সদস্য। কেন ওই দুই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হল না? দলের দ্বন্দ্বের জেরেই তো? তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজা বলেন, ‘‘সামান্য একটা সমস্যা রয়েছে। মিটে যাবে!’’
ঘাটাল ব্লকের দেওয়ানচক-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের ঘোষিত প্রধান ভুতনাথ কোটাল ও উপ প্রধান সঞ্জয় ঘোড়ুইদের বিরুদ্ধে গিয়ে তৃণমূলের একাংশ প্রতিনিধি ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রধান নিবার্চনের দাবি জানায়। ভোটাভুটিতে ১৩-০৩ ভোটে দলের ঘোষিত প্রধান ভুতনাথ কোটাল ও উপপ্রধান সঞ্জয় ঘোড়ুইকে হারিয়ে প্রধান হন প্রশান্ত বাইরি এবং উপপ্রধান হন শিবশঙ্কর ভুঁইয়া। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের তরফে প্রধান শঙ্কর ঘোষে নাম ঘোষণা হয়। গোষ্ঠী বিভাজনের জেরে ভোটাভুটি হয়। সেখানে শঙ্কর ঘোষকে হারিয়ে প্রধান নিবার্চিত হন প্রিয়াঙ্কা ঘোষ ভুঁইয়া। সূত্রের খবর, প্রিয়াঙ্কা বিজেপির এক সদস্যের ভোট পেয়েছেন। দাসপুর ১ ব্লকে সড়বেড়িয়া-২ পঞ্চায়েতেও দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোটাভুটি হয়। সেখানে প্রধান পদে কমল জানা নাম ঘোষণা করে দল। ভোটাভুটির মাধ্যমে কমল জানার পরিবর্তে প্রধান হন দলের বিক্ষুব্ধ কার্তিক ভুঁইয়া।
গোয়ালতোড়ের (গড়বেতা ২) পিংবনি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩ টি আসনের মধ্যে ১১ টিতে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল তৃণমূল। ২ টি পেয়েছিল বিজেপি। ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব ঝর্না মালকে প্রধান পদে প্রস্তাব করলেও, এ দিন বোর্ড গঠনের সময় সেই নামে আপত্তি জানান তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা কদমডিহা আসন থেকে জেতা যমুনা মান্ডি সরেনের নাম প্রস্তাব করেন। ভোটে যমুনা পেয়েছেন ৭ টি ভোট, ঝর্না পেয়েছেন ৬ টি ভোট। ব্লক নেতৃত্বের প্রার্থীকে হারিয়ে তৃণমূল কর্মীদের একাংশ যমুনাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। কেশিয়াড়ির ঘৃতগ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধানের ঘোষিত নাম নিয়ে অসন্তোষ জানায় কেশিয়াড়ি তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। তবে শেষমেশ তৃণমূলের খুকুমনি মুর্মু প্রধান ও অঙ্কুর শীটকে উপপ্রধান করে বোর্ড গঠন হয়। নারায়ণগড়ে নারমাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ না করতে পারায় বোর্ড গঠন বাতিল হয়েছে। জানা গিয়েছে তৃণমূলের পক্ষে প্রধান, উপপ্রধানের দাবিদার নিয়ে সমস্যা ছিল।