—প্রতীকী চিত্র।
শিক্ষাদীক্ষা এবং পরীক্ষার সাফল্যের নিরিখে বরাবরই অগ্রণী জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। অথচ সেই জেলাতেই পালিয়ে গিয়ে নাবালিকাদের বিয়ে এবং তাদের গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা মারাত্মক হারে বাড়ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনও উদ্বিগ্ন।
জুন মাসের শেষ সপ্তাহে শুধু কাঁথি-৩ ব্লকে চার নাবালিকার বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। এর মধ্যে তিন জনের বিয়ে আটকেছে প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রের খবর, শুধু কাঁথি-৩ ব্লকে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে এ বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৮ বছরের নীচে প্রায় ৬০০ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ১৫-১৯ বছরের ৮৬৫ জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে জুন মাস পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে গর্ভবতী হয়েছেন ৬০ জন। যদিও এ ব্যাপারে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত কুমার দেওয়ান বলেন,"গত বছরের তুলনায় অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার সংখ্যা কমেছে।"
চলতি বছর এপ্রিল থেকে কাঁথি-৩, কাঁথি -১, দেশপ্রাণ, রামনগর, এগরা, পটাশপুর, খেজুরি, চন্ডীপুর এবং নন্দীগ্রাম এলাকায় বাড়ি থেকে নাবালিকাদের পালিয়ে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এরা অধিকাংশ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। জেলার শিশু সুরক্ষা কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ টি থানায় নাবালিকা মেয়ের বিয়ের লিখিত অভিযোগ এসেছে।
কাঁথি-৩ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আবু সুফিয়ান বলেন,"কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে হলে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। কারণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান তৈরি হয় না। এই মায়েদের প্রসবকালে মৃত্যুর আশঙ্কাও বেশি থাকে।" কিন্তু কিছুতেই নাবালিকা বিয়ে থামানো যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, নাবালিকা বিয়ে ঠেকাতে রাজ্য সরকারের প্রকল্প রয়েছে। সচেতনতা অভিযান, প্রচারও চলে। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মন্ডল বলছেন,"এই সব প্রকল্প শুধুমাত্র ঢক্কানিনাদ ছাড়া আর কিছুই না। অনেকাংশেই পুলিশ আর প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা বাড়ে। এটা দুর্ভাগ্যের।"
যদিও কাঁথি -৩ বিডিও দীপক কুমার ঘোষ বলছেন,"আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সমস্ত সরকার পোষিত হাইস্কুলে ছাত্রীদের এ ব্যাপারে সচেতন করা চলছে।" পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন,"নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। তবু আমরা স্কুল গুলির সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় রেখে এ ধরনের সামাজিক সমস্যার মোকাবিলার করার উপর জোর দিচ্ছি।"