সুফল বাংলায় ২৫, বাজারে আলু ৩০-৩৫ টাকা
Coronavirus Lockdown

আনাজের বেলাগাম দরে নাজেহাল গৃহস্থ 

গত কয়েক মাস ধরে বাজারে আলুর দাম ক্রমাগত বাড়ার অভিযোগ নজরে আসতেই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক ও কাঁথি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০১:০২
Share:

সুফল বাংলা স্টল থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র

করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই মানুষের রুটি-রুজিতে টান পড়েছে। তার উপর বাজারে দামে একা আলুতে রক্ষে নেই, দোসর আনাজ। ২০০ টাকাতেও ভরছে না বাজারের থলে। নাজেহাল গৃহস্থ।

Advertisement

গত কয়েক মাস ধরে বাজারে আলুর দাম ক্রমাগত বাড়ার অভিযোগ নজরে আসতেই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। গত শুক্রবার রাজ্য সরকারের তরফে বাজারে আলুর খুচরো বিক্রির দাম ২৫ টাকা কিলোগ্রাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যদিও জেলার বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম এখনও গড়ে ৩০- ৩২ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি চলছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কৃষিবিপণন দফতরের অধীনে ‘সুফল বাংলা’ স্টল থেকে ২৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। অথচ তমলুকের বড়বাজারে জ্যোতি আলু ৩০ টাকা ও চন্দ্রমুখী ৩৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে এ দিন কিনতে হয়েছে বাসিন্দাদের। নন্দকুমার, খঞ্চি, নোনাকুড়ি, চণ্ডীপুর এবং ময়না বাজারেও ৩০ টাকা কিলোগ্রাম দরেই জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ। তমলুকের বড়বাজারে আলু কিনতে আসা বিকাশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে শুক্রবার বাজারে বিক্রির জন্য আলুর দাম ২৫ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অথচ বাজারে আলুর সেই ৩০-৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই। তাহলে সরকারি ঘোষণায় আলুর দাম বেঁধে কী লাভ হল।’’ তমলুকের ‘সুফল বাংলা’র স্টলের কর্মী সৌরভ আদক বলেন, ‘‘আজ থেকেই ২৫ টাকা দামে আলু বিক্রি শুরু করা হয়েছে। তবে ক্রেতাদের খুব ভিড় নেই।’’

রাজ্য সরকারের ঘোষণার পরেও বাজারে আলুর দাম যে কমেনি তা স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা। তমলুকের বড়বাজারের আনাজ ব্যবসায়ী সচিন হাজরা বলেন, ‘‘৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরেই আলু বেচতে হচ্ছে। কারণ পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা যেমন দামে কিনেছি সে ভাবে খুচরো দরে বিক্রি করছি। আলুর দাম বেঁধে দেওয়া নিয়ে প্রশাসন থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’’

Advertisement

আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক নজরদারি নিয়ে জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খতিয়ে দেখতে জেলার সব এসডিও, বিডিও এবং কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিককে বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

শুধু আলু নয়, আনাজের দামেও গৃহস্থের হাতে থেঁকা লাগার জোগাড়। টম্যাটো থেকে কাঁচা লঙ্কা, পটল, উচ্ছে, শশা সবই দ্বিগুণ দাম ছুঁয়ে ফেলেছে। কাঁথি শহরের সবচেয়ে বড় সুপার মার্কেট, রাজাবাজার, নেতাজি মার্কেট, সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড বাজার বন্ধ করোনার সংক্রমণ বাড়ায় বন্ধ। আপাতত শহর জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে আনাজ এবং মাছ নিয়ে অস্থায়ী দোকান বসেছে। তাদের ওপর কোনওরকম প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কিংবা পুরসভার নজরদারি নেই বলে শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ। টম্যাটো-১০০, বেগুন-৪০-৫০ টাকা, পটল ১৪০ টাকা, কুমড়ো-২০-২৫ টাকা এবং কাঁচা লঙ্কা-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের দাবি, এ ভাবে আনাজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লে মধ্যবিত্তের পক্ষে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। অবিলম্বে শহরের বাজারগুলিতে প্রশাসন এবং পুরসভার নজরদারি দরকার। প্রয়োজনে আনাজ এবং মাছের দাম বেঁধে দিতে হবে। এক সময় বাজারে যেমন খুশি দাম নেওয়া আটকাতে সরকারি উদ্যোগে টাস্ক ফোর্স তৈকি করা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন তা করা হচ্ছে না সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। আনাজের দাম বাড়ার বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন কাঁথির মহকুমা শাসক শুভময় ভট্টাচার্য। কিন্তু তারপরেও আনাজ কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের হাত পুড়ছে। আনাজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য সত্যেন্দ্রনাথ জানা বলেন, ‘‘শহর জুড়ে যত্রতত্র অস্থায়ী বাজার রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় অভিযান চলছে। বাকি জায়গাগুলিতে ওই সব দোকানে নজরদারির চেষ্টা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement