মর্জিনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র।
পিসির অভাবের সংসারে বড় হওয়া। সেই সংসার কখনও প্রতিবেশীর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে, আবার কখনও ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে। ওই পরিবারের বালিকাই ফিরিয়ে দিল কুড়িয়ে পাওয়া সোনার দুল!
খেজুরি-১ ব্লকের বেগুনাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বছর বারোর মর্জিনা খাতুন গত বছর স্থানীয় নিউ প্রাইমারি স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি পাস করেছে। গত বছর লকডাউনে অর্থের অভাবে সে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি। এই অভাবী বালিকা এখন প্রতিবেশীদের স্নেহের পাত্র হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত সোমবার বেগুনাবাড়ি হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রীদের সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল বিলির জন্য কুপন দেওয়া হচ্ছিল। ওই কুপন সংগ্রহ করতে গিয়েছিল গ্রামেরই এক কিশোরী সুচন্দ্রা জানা। পথে নিজের সোনার দুল হারিয়ে ফেলে সে। সেটিই কুড়িয়ে পেয়ে সুচন্দ্রাকে ফিরিয়ে দিয়েছে মর্জিনা। সুচন্দ্রা বলছে, ‘‘দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে মাস্ক খুলে দেখি এক পাশে দুল নেই। বাড়িতে বকুনি খেয়ে বান্ধবীদের নিয়ে রাস্তায় সোনার দুল খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি।’’ সুচন্দ্রার বাবা সোমনাথ জানা বলেন, ‘‘স্কুলের মাঠে মেয়ের কানের দুল খোঁজার সময় ছোট্ট একটি মেয়ে ছুটে এসে ওই কানের দুল দেখিয়েছিল। তারপর আমরা চিনতে পারি।’’
মর্জিনার বাবা ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। মা মামার বাড়িতে। পিসির কাছেই ছোটবেলা থেকে বড় হচ্ছে মর্জিনা। পিসি আজিমান বিবি অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। অভাবের সংসার হলেও ভাইঝির সততায় মুগ্ধ পিসি বলছেন, ‘‘ওসোনার দুল কুড়িয়ে পেয়ে আমাকে দেখিয়েছিল। বলেছিলাম, কেউ প্রমাণ দেখাতে পারলে তাকে ফেরত দিবি, না হলে স্কুলে গিয়ে জমা দিয়ে আসবি। কিন্তু পরে শুনলাম গ্রামেরই একটি মেয়ের জিনিস। তাকে দুল ও ফেরত দিয়েছে।’’
ছোট্ট মর্জিনার ভূমিকায় খুশি তার পুরনো স্কুল। যে স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি পাশ করেছে সে, সেই নিউ প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘স্কুলে যখন ও পড়ত, তখন কারও পেনসিল, খাতা কুড়িয়ে পেলে, তা আমাদের কাছেই জমা দিয়ে যেত। ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের এভাবেই আদর্শ বোধ আমাদের আরও বেশি করে শেখাতে হবে।’’