—প্রতীকী চিত্র।
গোকুলনগরের তৃণমূল কর্মী খুনে নন্দীগ্রামের ৩৫ দন বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই এলাকার বাসিন্দা নন। অথচ এলাকার পঞ্চায়েতের কিছু জনপ্রতিনিধি এবং পদাধিকারীর নাম নেই অভিযুক্ত তালিকায়। এই সূত্রেই সামনে আসছে পদ্মের একাংশের সঙ্গে ঘাসফুলের গোপন বোঝাপড়া। চর্চায় গেরুয়া শিবিরের ভাঙনও। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, যারা পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক খুন করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করা হয়েছে। এতে আর কোনও রাজনীতির
সমীকরণ নেই।
নন্দীগ্রামের গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বৃন্দাবনচকে তৃণমূল কর্মী মহাদেব বিষয়ীকে খুনের অভিযোগে বিজেপির ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ করেছেন নিহতের ভাই জয়দেব বিষয়ী। অভিযুক্তর তালিকায় প্রথমেই আছে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পালের নাম। এছাড়াও রয়েছে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ৩জন মণ্ডল সভাপতি, গোকুলনগর পঞ্চায়েতের প্রধান দীনবন্ধু মণ্ডল, নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, জেলা কমিটির সদস্য-সহ একাধিক বিজেপি
কর্মীর নাম।
গোকুলনগর পঞ্চায়েত বিজেপি পরিচালিত। সেখানকার যে সব বিজেপি নেতা বা কর্মীর নামে অভিযোগ করা হয়নি, তাঁদের অনেকেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছেন এবং দলবদলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন, এমনটাই খবর। সম্প্রতি গোকুলনগরের বিজেপি প্রধান দীনবন্ধুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দেবাশিস দাস-সহ বিজেপির একাধিক জন প্রতিনিধি। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে জামবাড়িতে থাকেন বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য অশোক করণ। বিজেপি কর্মীদের একাংশের দাবি, অশোক গোষ্ঠীর জনপ্রতিনিধিরাই বিজেপি প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বাড়ি নন্দীগ্রাম ২ মণ্ডল সভাপতি ধনঞ্জয় ঘড়ার। তাঁর নামে অভিযোগে হয়েছে। অথচ সেই অশোক করণ, দেবাশিস দাস-সহ অনেকেরই নাম নেই। ২০২০ সালে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন অশোক। তার ৭ দিন আগে দলের তরফে বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া হয়েছিল অশোককে। সেই অশোক বলছেন, ‘‘বিজেপি পরিচালিত গোকুলনগর, সোনাচূড়া এবং কালীচরণপুর পঞ্চায়েতের একাধিক বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে জরিমানা তোলা আদায়ের অভিযোগ আছে। যাঁদের তোলাবাজি, মারধরের অভিযোগ, তাঁদেরই বরমাল্য পরানো হচ্ছে। সংগ্রামী ভাতা দেওয়ার ঘোষণা হচ্ছে। তার ফল তো হিন্দু লোককে
পেতেই হবে।’’
অশোক আরও বলেন, ‘‘আমি ৩০ ডিসেম্বর বিজেপির তরফে দেওয়া নিরাপত্তা রক্ষী ছেড়ে দেব। প্রায় ৬ মাস আগে দলের পদে ইস্তফা দিয়েছি, কিন্তু দল গ্রহণ করেনি।’’ তৃণমূলে যাচ্ছেন? এ বার জবাব, ‘‘এখনও কিছু ঠিক করিনি।’’ বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক মেঘনাদ পালের দাবি, ‘‘আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতেই কিছু নেতার নামে অভিযোগ করেনি তৃণমূল। এটা রাজনৈতিক কৌশল। তবে এতে লাভ হবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।’’ নন্দীগ্রামের তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য তথা স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শামসুল ইসলামের পাল্টা দাবি, ‘‘যারা পূর্ব পরিকল্পনা করে আমাদের কর্মীকে খুন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এর সাথে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’