আড়াই মাসে গড়বেতার সোনা ব্যবসায়ী খুনের কিনারা

ডাকাতির টোপ পুলিশের, জালে ৬

মাথায় গামছা বাঁধা, পরনে নীল চেক লুঙ্গি আর আধ ময়লা গেঞ্জি। মাঝ বয়সী কয়েক জন ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়ার গিয়েছিলেন ডাকাতির ‘বায়না’ দিতে। সঙ্গে ছিলেন মহিলারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১১
Share:

মেদিনীপুরে ধৃত দুষ্কৃতীরা। রয়েছেন পুলিশ সুপার।—নিজস্ব চিত্র

মাথায় গামছা বাঁধা, পরনে নীল চেক লুঙ্গি আর আধ ময়লা গেঞ্জি। মাঝ বয়সী কয়েক জন ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়ার গিয়েছিলেন ডাকাতির ‘বায়না’ দিতে। সঙ্গে ছিলেন মহিলারাও। ঝা়ড়খণ্ডের এক বড় দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা জানান, পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু বড় কাজের খোঁজ দেওয়া হবে। বখরা ভাগ হবে দুই দলে। রাজি হয়ে যায় ভিন্ রাজ্যের ডাকাতরা। তাতেই কেল্লা ফতে।

Advertisement

যাঁরা ডাকাত সেজে, ভিন্ রাজ্যে ডাকাতির ‘বায়না’ দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা হলেন ঝাড়গ্রামের এসডিপিও বিবেক ভার্মা, ডিএসপি (অপারেশন) অতীশ বিশ্বাস, ওসি (স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ) কবিতা দাস। আর যার ধরা পড়ল তারা গড়বেতায় সোনা ব্যবসায়ী অমল দত্ত খুনে অন্যতম অভিযুক্ত। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার জানিয়ে দিলেন, কিনারা হয়েছে গ়ড়বেতায় খুনের। ধরা পড়েছে ছয় দুষ্কৃতী। তার মধ্যে চার জন ঝাড়খণ্ডে ও বিহারের বাসিন্দা। দু’জন এ রাজ্যের। তারা মূলত ‘মিডলম্যান’-এর কাজ করেছিল গড়বেতার ওই ডাকাতির ঘটনায়। পুলিশের দাবি, মূল অভিযুক্তদের মধ্যে আরও তিন জন পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ভারতীদেবী বলেন, “পুলিশ কর্মীরা ওদের মতো (ডাকাতদের) সেজেই ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। ডাকাতির টোপ দেওয়া হয়। গড়বেতা কাণ্ডের কিনারা করাটা আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।”

গত ১৩ জুলাই দুপুরে বাড়ি থেকে ডেকে এনে দোকানের মধ্যে কুপিয়ে খুন করা হয় গড়বেতা বাজারের সোনা ব্যবসায়ী অমল দত্তকে। সে ঘটনায় বাজারের দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু আড়াই মাসেও খুনের কিনারা হয়নি। যে ভাবে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ভরদুপুরে নিজের দোকানের মধ্যেই এক সোনার ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন করা হয় তাতে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী মহল। দাবি ওঠে সিআইডি তদন্তের।

Advertisement

গড়বেতার ব্যস্ত এলাকায় এমন খুন ও ডাকাতির ঘটনা নজিরবিহীন। ওই দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা না-থাকায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতেও অসুবিধা হচ্ছিল পুলিশের। তবে প্রথম থেকেই পুলিশের অনুমান ছিল দুষ্কৃতী দলটি অপরাধের পর ভিন্ রাজ্যে পালিয়ে গিয়েছে। সিআইডি তদন্তের দাবি ওঠার পর গড়বেতা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে পুলিশ। সেই দলে ছিলেন স্পেশ্যাল অপারেশন সেলের একাধিক অফিসার। তাঁরাই ঝাড়খণ্ডে গিয়ে টোপ দিয়ে ডাকাত ধরেন। ভারতীদেবীর দাবি, ‘‘প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে দেখার পর, দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে একটা ধারণা হয়। তাই খানিকটা সময় লেগে গেল।’’

ঘটনায় ধৃত ছ’জনের নাম বজরঙ্গি শাহ, রঞ্জিত পাসোয়ান ওরফে মুখিয়া, সঞ্জয় কুমার, সন্দীপ কুমার, অভিজিৎ দে ওরফে চুনা, মধু সার ওরফে পচা। অভিজিৎ বিষ্ণুপুরের পোদ্দারপাড়ার বাসিন্দা। তার মাধ্যমেই গড়বেতায় কাজ হাসিল করেছিল ডাকাত দলটি। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ডাকাতির আগের দিন অর্থাৎ ১২ জুলাই ঝাড়খণ্ড থেকে ট্রেনে করে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে আসে দুষ্কৃতীরা। স্টেশনের কাছেই একটি লজে রাত কাটায়। ঘটনার দিন সকালে একটি গাড়ি নিয়ে গড়বেতায় চলে আসে। গাড়িটি চালিয়েছিল অভিজিতের পরিচিত মধু সার। খুনের পরে পুরুলিয়ার আদ্রায় লুঠের গয়না ভাগ হয়। পুলিশের দাবি, ঘটনার আগে অন্তত পাঁচবার গড়বেতায় এসেছিল দুষ্কৃতী দলটি। কী ভাবে ওই দোকানে ডাকাতি করা যায়, কোন রাস্তা দিয়ে পালানো যায়— সবই রেকি করা ছিল।

কিন্তু কেন খুন হতে হল অমল দত্তকে? ভারতীদেবীর দাবি, ডাকাতিতে বাধা পেয়েই এই খুন।

তবে ভিন্ রাজ্য থেকে এসে ডাকাতির ঘটনা যে আরও ঘটেথাকতে পারে তা মানছেন পুলিশ সুপার। তাঁর কথায়, “এটা আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতীচক্রের কাজ। অপরাধের একটা নতুন দিক। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশের দাবি, ধৃত ছ’জনের সঙ্গে বড় দুষ্কৃতী দলের যোগ রয়েছে। মুকেশ প্রসাদ-সহ অধরা অন্য তিন জন ধরা পড়লে তদন্তে গতি আসবে বলে তাঁদের ধারণা। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলাতেও এদের কোনও অপরাধ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বজরঙ্গি শাহ, রঞ্জিত পাসোয়ানের নামে ভিন রাজ্যেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement