New Criminal Laws

রাত জেগে ধারা শিখছেন পুলিশ থেকে আইনজীবীরা 

খুনের চেষ্টায় ৩০৭- এর পরিবর্তে ১০৯। ধর্ষণে ৩৭৬-এর পরিবর্তে ৬৪। প্রতারণার অভিযোগে ৪২০- এর পরিবর্তে লাগু হবে ৩১৮ (৪)। চুরির অভিযোগে আইপিসি- র ক্ষেত্রে ছিল ৩৭৮ ধারা। বিএনএস- এ রয়েছে ৩০৩ ধারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা আইন বাতিল হয়ে সোমবার থেকে বলবৎ হয়েছে নতুন তিনটি আইন। নতুন আইনে অভিযোগ দায়ের থেকে মামলা রুজুও শুরু হয়েছে। ফলে, নতুন আইনের ধারা মুখস্থ করতে রাত জাগছেন একাংশ পুলিশকর্তা, একাংশ আইনজীবীও। পুরনো আইনের ধারা তাঁদের ঠোঁটস্থ হয়ে গিয়েছিল। এ বার নতুন আইনের ধারা পড়ার পালা। এক পুলিশকর্তা বলছিলেন, ‘‘আবার পড়াশোনায় ফিরতে হয়েছে। রাতে পড়ছি। নতুন ধারা মুখস্থ করতে হচ্ছে।’’ প্রশিক্ষণ হল যে? তাঁর মন্তব্য, ‘‘ক’দিনের প্রশিক্ষণে কী আর সব শেখা যায়!’’

Advertisement

১৮৬০ সালের ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (আইপিসি) বা ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে চালু হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)। ১৮৯৮ সালে চালু হওয়া ‘ক্রিমিনাল প্রোসিডিওর অ্যাক্ট’ (সিআরপিসি) বা ফৌজদারি বিধির বদলে চালু হয়েছে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা। এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ বা ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের বদলে চালু হয়েছে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম। নয়া তিনটি আইন সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। আগে যেমন খুনের ধারা ছিল ৩০২, খুনের চেষ্টার ৩০৭, ধর্ষণের ৩৭৬, প্রতারণার ৪২০। নতুন আইনে খুনের অভিযোগে লাগু হবে ১০৩ (১) (অভিযুক্ত চার বা চারের কম) কিংবা ১০৩ (২) ধারা (অভিযুক্ত পাঁচ বা তার বেশি)। অনিচ্ছাকৃত খুনে ৩০৪ (এ)-এর পরিবর্তে ১০৬ (১)।

খুনের চেষ্টায় ৩০৭- এর পরিবর্তে ১০৯। ধর্ষণে ৩৭৬-এর পরিবর্তে ৬৪। প্রতারণার অভিযোগে ৪২০- এর পরিবর্তে লাগু হবে ৩১৮ (৪)। চুরির অভিযোগে আইপিসি- র ক্ষেত্রে ছিল ৩৭৮ ধারা। বিএনএস- এ রয়েছে ৩০৩ ধারা। আগে গণপিটুনি বা ছিনতাইয়ের জন্য আলাদা ধারা ছিল না। নতুন আইনে তা আনা হয়েছে। নাবালিকা ধর্ষণের আইন কঠোর হয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ‘পলাতক’ অভিযুক্তের সম্পত্তির দখল নিতে পারলেও বিক্রি করার সুযোগ ছিল না পুরনো আইনে। নতুন আইনে সিবিআই-ইডির মতো সেই সুযোগও পুলিশের থাকছে।

Advertisement

নতুন আইন নিয়ে শুরুতে পুলিশের আধিকারিকদের রাজ্যস্তরে প্রশিক্ষণ হয়েছে। জেলাস্তরেও প্রশিক্ষণ হয়েছে। ওই সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে একে একে সব এসআই (সাব ইন্সপেক্টর), এএসআই (অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর)-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ‘মাস্টার ট্রেনারে’রা। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘জেলার সব এসআই, এএসআই-দের প্রশিক্ষণ হয়েছে।’’

পুলিশের এক সূত্রে খবর, পশ্চিমাঞ্চলের দু’টি জেলায় ইতিমধ্যে সব এসআই, এএসআই- দের প্রশিক্ষণপর্ব সম্পূর্ণ হয়েছে। একটি পশ্চিম মেদিনীপুর, আরেকটি পূর্ব বর্ধমান। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪০৭ জন এসআই, এএসআই প্রমুখের প্রশিক্ষণ হয়েছে। জানা গিয়েছে, তদন্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকেন এসআই, এএসআই প্রমুখ। তাই শুরুতে এঁদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে কনস্টেবলদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে। তবে সরকারি আইনজীবীদের সকলের এখনও প্রশিক্ষণ হয়নি। নতুন আইন নিয়ে আইনজীবীদের একাংশের ধন্দ কাটেনি। নতুন আইনে সাক্ষ্য সংগ্রহে অডিয়ো-ভিডিয়োর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে পুলিশ মহলেও প্রশ্ন রয়েছে। আইনজীবীদের অনেকের মতে, নতুন আইনে পুলিশকে ‘অতিরিক্ত ক্ষমতা’ দেওয়া হয়েছে। এতে নাগরিকের অধিকার খর্ব হবে। উল্টো মতও আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement