মারা গেলেন কবি শম্ভু রক্ষিত। সত্তরের দশকের অন্যতম শক্তিমান কবি শুক্রবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সুতাহাটার প্রত্যন্ত গ্রাম বিরিঞ্চিবেড়িয়ায় নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী, পুত্র কীর্তিকর, দুই মেয়ে দিওত্তিমা ও পৃথা এবং নাতি নাতনিদের।
হাওড়ায় মামার বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১৬ অগস্ট জন্ম। হাংরি আন্দোলনের সময় ‘ব্লুজ’ পত্রিকায় লিখতেন তিনি। জরুরি অবস্থার সময় লেখার জন্য গ্রেফতার হয়েছিলেন। জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্রের গণতন্ত্ররোধী ব্যবস্থার বিরোধিতায় কবির ভূমিকাকে সম্মান জানিয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। শব্দ আর জীবনচর্চায় তিনি বরাবরই প্রচলিত ধারার বাইরে। কফি হাউসে মাথায় ফেট্টি বাঁধা আর মলিন পোশাকের শম্ভু রক্ষিতকে সমীহ করতেন অনেক সাহিত্যিক। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ আটটি। ‘প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না’ তাঁর সবচেয়ে আলোচিত কাব্যগ্রন্থ। কবির সম্পাদিত গ্রন্থ ‘বিদ্রোহ জন্ম নেয়’ জরুরি অবস্থার সময় প্রকাশ পায়। উপন্যাস ‘অস্ত্রনিরস্ত্র’।
কখনও কোনও সরকারি আনুকূল্য নেননি। কিন্তু চরম দারিদ্র তাঁর কাব্য সাধনায় বাধা হয়ে উঠতে পারেনি। দেশ-বিদেশ থেকে কিছু সম্মান পেয়েছেন। লকডাউনের সময় খবর আসছিল ভাল নেই কবি। দীর্ঘদিন পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। স্মৃতির ঘরেও বিস্মৃতির আবছায়া। বহুদিন কার্যত ঘরবন্দি ছিলেন। কবি বন্ধুরা আসতেন। কিছুদিন আগে তাঁর বাড়িতেই তাঁর সম্পাদিত ত্রৈমাসিক কবিতা পত্রিকা ‘মহাপৃথিবী’র পঞ্চাশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হয়।
শম্ভু রক্ষিতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুজন কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। তাঁর বাড়ি ‘নন্দায়ন’এ এদিন জনাপঞ্চাশেক গুণমুগ্ধ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কবিভ্রাতা শ্যামল রক্ষিত ও ‘মহাপৃথিবী’র সহযোগী সম্পাদক চন্দন দাস। ঝড়ে লন্ডভন্ড গ্রামের গাছপালা, পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় কবির বাড়ি।
স্মৃতিচারণ করছিলেন কেউ কেউ। হলদি নদীর তীরে দমকা বাতাসে কবিতার ঝোলা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কবি তাকিয়ে জাহাজ এমভি সুচেতনার দিকে। সঙ্গী কাউকে শম্ভু রক্ষিত বলছেন, ‘নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে শব্দের গভীর সম্পর্ক। আসলে আমি নিজে কবিতা লেখা ছাড়া আর কী পারি? আমি আসলে অক্ষর সাধক।’’