তৃণমূল নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে।
বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপি ভাঙছে রেলশহরে, নেতা-কর্মীরা যাচ্ছেন তৃণমূলে। অন্য দিকে তৃণমূলেও দেখা দিচ্ছে গোষ্ঠীকোন্দল। রাজনৈতিক অস্থিরতার এই ছবি যে কোনও ভোটের আগেই বড্ড চেনা খড়্গপুরবাসীর। এই আবহেই রেলশহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতিকে খুনের চক্রান্তের গুঞ্জন ঘিরে সরগরম হল খড়্গপুর। তারই মধ্যে অস্ত্র-সহ এক যুবক গ্রেফতার হওয়ায় অশান্তির সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শহরবাসী।
খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ-সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে খুনের চক্রান্ত চলছে বলে রবিবার রাত থেকে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ না হলেও তদন্তে নেমেছে পুলিশ। রবিশঙ্করকে ‘সাবধানে থাকা’র পরামর্শও পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
রবিশঙ্কর বলছেন, “৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন ঘটনার মুখোমুখি হইনি। আমার সঙ্গে কারও তো তেমন শত্রুতা নেই। আমাকে খুনের চক্রান্ত হচ্ছে পুলিশের মাধ্যমে শুনেছি। পুলিশ থেকে আমাকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।” শহরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ সরকার বলেন, “রবিদাকে কে, কী কারণে খুন করতে চাইবে, সেটাই আমাদের অবিশ্বাস্য লাগছে।” বিরোধীরা এতে তৃণমূলের কোন্দল দেখছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “খড়্গপুরে এখন তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব সকলের জানা। কে কাকে মারবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।”
তবে খুনের যড়যন্ত্রের সত্যতা নিয়ে ধন্দে পুলিশও। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদের কথায়, “তদন্ত চলছে। এখনও তেমন কোনও সত্যতা সামনে আসেনি।”
পুরভোট হোক, বিধানসভা বা লোকসভা— খড়্গপুর শহর বারবারই ভোট-মরসুমে দুষ্কৃতীরাজ দেখেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এখন শুরু হয়েছে দলবদলের পালা। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের তালুক হওয়া সত্ত্বেও এখানে বিজেপি ভেঙেছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও চরমে উঠেছে। বস্তুত, রবিশঙ্করও কংগ্রেস ছেড়েই তৃণমূলে এসেছিলেন।
রাজনীতির আবর্তে রেলশহরের পারদ যখন চড়ছে, তারই মধ্যে রবিবার গভীর রাতে পুরীগেট এলাকা থেকে লক্ষ্মণ রাও নামে এক যুবককে অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, প্রয়াত রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর গোষ্ঠী থেকে এক সময় ছিটকে যাওয়া লক্ষ্মণ সাউথ-সাইডের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন নানা দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত এই যুবক ২০১৯ সালের অগস্টেও গ্রেফতার হয়েছিল। রবিবার রাতে সে পুরীগেটে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছে বলে খবর পায় টাউন পুলিশ। হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় তাকে। বাজেয়াপ্ত হয় একটি ইম্প্রোভাইজ্ড পিস্তল। সোমবার খড়্গপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক লক্ষ্মণকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ফাইল চিত্র