মৃতদেহ কবর দেওয়ার কথা জেনে উত্তেজনা মেদিনীপুরের তাঁতিগেড়িয়ায়। নিজস্ব চিত্র
ফের হুলুস্থুল হল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। বুধবার রাতে ওই রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। দেখা যায়, রিপোর্ট পজ়িটিভ।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মৃতের বাড়ি ঘাটালের মোহনপুরে। বছর চৌত্রিশের এই পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্র থেকে ফিরেছিলেন। জেলায় এই মহকুমায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একশো পেরিয়েছে। বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার সকাল মিলিয়ে ঘাটাল- দাসপুরে নতুন করে ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ঘাটাল ব্লকে দু’জন। বাকি সকলেই দাসপুরের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার আক্রান্তদের সবাই পরিযায়ী শ্রমিক। এ দিন আক্রান্তদের মধ্যে আট জনের জ্বর সহ অন্য উপসর্গ রয়েছে। ঘাটাল-দাসপুরে প্রত্যেককেই বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার ঘাটাল- দাসপুরে নতুন করে বেশ কয়েকজনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, ঘাটালের ওই যুবককে মঙ্গলবার বিকেলে ভর্তি করানো হয়েছিল। ওই যুবক শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। ওই দিন রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সবদিক দেখে ওই রোগীর করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছিল মেডিক্যালের পরীক্ষাগারে। বুধবার দুপুরে পরীক্ষা হয়। ওই দিন রাতে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। দেখা যায়, রিপোর্ট পজিটিভ। এরপরই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন হাসপাতালের একাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। উদ্বিগ্ন হন অন্য রোগী এবং রোগীর পরিজনেদের একাংশও। হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, ওই রোগীর সংস্পর্শে কারা এসেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরাসরি সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কোয়রান্টিন করা হবে। করোনা পরীক্ষাও করা হতে পারে। ওই যুবকের মৃত্যু কি করোনাতেই হয়েছে? হাসপাতালের এক আধিকারিকের জবাব, ‘‘খতিয়ে দেখা হবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জন্যই ওই মৃত্যু হয়েছে কি না। কো- মর্বিডিটির (অন্য রোগভোগ) জন্যও মৃত্যু হতে পারে।’’ এই নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমণ নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হল। আগেই জেলার ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ২ জনের কলকাতার হাসপাতালে। বাকি ৪ জনের মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালে (লেভেল- ২)। জানা যাচ্ছে, বুধবার রাতে মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট লেখা নিয়েও না কি খানিক সমস্যা হয়েছিল। পরে সে সমস্যা মিটেছে। ওই দিন রাতেই মৃতদেহ মেদিনীপুরের এক কবরস্থানে নিয়ম মেনে কবর দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালেই হাসপাতালে ভর্তি দুই রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসা ঘিরে হুলুস্থূল বেধেছিল। ওই দিন জেলায় নতুন করে ১৯ জন করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছিল। এর মধ্যে মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ২ জন রোগীও ছিলেন। পরে ওই দুই রোগীকে মেদিনীপুরের আয়ুষ হাসপাতালে (লেভেল- ১ করোনা হাসপাতাল) পাঠানো হয়। ফের হাসপাতালে করোনা সংক্রমিতের হদিস মিলল। এ বার রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। মৃত রোগীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন হাসপাতালের অন্য রোগীর পরিজনেদের একাংশও। হাসপাতালের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘অহেতুক উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যে পদক্ষেপ করার দ্রুতই করা হয়েছে।’’
জেলার ক্ষেত্রে ঘাটালই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের। কারণ, এখানেই সংক্রমণ বাড়ছে সবচেয়ে বেশি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন ঘাটাল মহকুমায় নতুন করে যে ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে দাসপুর-১ ব্লকে ১৫ জন এবং দাসপুর-২ ব্লকের চার জন রয়েছে। দাসপুর-১ ব্লকে আক্রন্তদের মধ্যে ২১ ও ২২ মে দিল্লি, মুম্বই ও গুজরাত থেকে দফায় দফায় ফিরেছিলেন। এঁরা প্রত্যেকেই সরকারি নিভূতবাস কেন্দ্রে সাতদিন কাটানোর পর বাড়িতে ছিলেন। দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে এঁদের লালারসের নমুনা নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে।
অন্য দিকে দাসপুর-২ব্লকে চার আক্রান্তের দু’জন দিল্লি ও দু’জন মহারাষ্ট্র থেকে ফিরেছিলেন। ৫ জুন সোনাখালি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে লালারসের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এই চারজন এবং দাসপুর-১ ব্লকের চারজনের করোনার উপসর্গ রয়েছে।প্রত্যেককেই অবশ্য এদিন মেদিনীপুর করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘাটালে দুই আক্রান্ত ২৯ মে মুম্বই থেকে ফিরেছিলেন।৫ জুন বীরসিংহ গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁদের লালারস নেওয়া হয়।