অমলেন্দু গাঙ্গুইয়ের ভাঙা বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
আকাশে কালো মেঘ ঘনালে ওদের চোখেমুখেও মেঘ ঘনায়। ফের কষ্টের ফসল নোনা জলে নষ্ট হয়ে যাবে না তো! আশঙ্কায় ওদের কাঁপে বুক। ওরা মানে অমলেন্দু, বাদল, সন্ধ্যার মতো অনেকের। সৈকত শহর দিঘার অনতিদূরের গ্রাম সমরবসানের বাসিন্দা এঁরা।
২০২০ সালে আমপান, ফনি, তারপর ইয়াস, একের পর এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা এখন ওদের অশনি আতঙ্কে ভাবিয়ে তুলেছে। কেননা, আগের ঘূর্ণিঝড়ে সব তছনছ হয়ে গিয়েছে। আজও জোটেনি সরকারি ক্ষতিপূরণ। কোনওরকমে সামলে ওঠার চেষ্টা চলছে এখনও। ফের ঘূর্ণিঝড়ে যদি সব লন্ডভন্ড হয়ে যায় তাহলে আর বাঁচার উপায় থাকবে না। মাঠ থেকে পাকা ধান কেটে তার বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন স্থানীয় জগদীশপুর গ্রামের গুরুপদ দাস। যেতে যেতেই আশঙ্কার কথা শোনালেন অশীতিপর জগদীশ। তাঁর কথায়, ‘‘আতঙ্ক তো হবেই। আগের অভিজ্ঞতা তো ভাল নয়। তাই এখন বাঁচবো কি মরব ঈশ্বরই জানেন।’’
মঙ্গলবার সকাল থেকে কখনও রোদ, কখনও হালকা কালো মেঘ দেখা গিয়েছে সৈকত শহরে। সঙ্গে ছিল দমকা ঝোড়ো বাতাস। সেই বাতাসে কুঁড়েঘর নড়ে উঠলেই বুক কেঁপে উঠছিল দিঘা মোহনার ঠিক পাশের গ্রাম সমরবসানের বাসিন্দাদের। বছর খানেক আগে ইয়াসে মাথার উপরের ছাউনি উড়ে চলে গিয়েছিল। ঘর ভেঙে গিয়েছিল। ত্রিপল আর দড়ি জোগাড় করে নতুন করে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুর ব্যবস্থা হয়েছিল। তারই মধ্যে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের ঘূর্ণিঝড় অশনির আতঙ্ক।
গ্রামের এক মৎস্যজীবী দেখালেন, কী ভাবে ইয়াসে গোটা ঘরটা পাল্টি খেয়ে গিয়েছে পড়েছে পাশের ফাঁকা জায়গায়। তারপর কোনওরকমে দড়ি দিয়ে বেঁধে সেটাকে আটকে রেখেছেন। আপাতত সেখানেই স্ত্রী, বাচ্চা এবং বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে দিন কাটছে। গোটা পাড়ায় চারদিকেই শুধু ইয়াসের ক্ষত। ইয়াসের সময় কয়েক দিন বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন কেউ কেউ। পরে ফিরে দেখেন বাড়ির অস্তিত্বটুকু নেই। ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ সরকারি ক্ষতিপূরণ আজও জোটেনি সমরবসান গ্রামের অনেকেরই। গ্রামের অমলেন্দু গাঙ্গুই দিনমজুরি করে সংসার চালান। তাঁর কথায়, ‘‘আগের ঝড়ে এত ক্ষতি হলেও সরকারিভাবে একটা কানাকড়িও জোটেনি। এবার কী হবে ভেবে আতঙ্কে আছি। ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে কোথায় যাব!’’
অশনির আশঙ্কায় বুকে কাঁপছে নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদেরও। দু'বছর আগে আমপানে পুরো বাড়ি ভেঙে যায় তপন শতপথির। পেশায় চাষি তপনের কথায়, ‘‘আবাস যোজনা দূরের কথা, আমপানে ক্ষতিপূরণ বাবদ কুড়ি হাজার টাকাও জোটেনি আজ পর্যন্ত। প্রশাসনিক আধিকারিকদের দোরে দোরে ঘুরেছি। সব জায়গাতেই শুনতে হয়েছে অপেক্ষা করার কথা।’’ ভাঙাচোরা বাড়িতেই থাকা স্ত্রী সন্ধ্যা দেবী বলেন, ‘‘কী আর করব। তেমন হলে কোথাও না কোথাও আশ্রয় তো নিতেই হবে।’’
বছর ঘুরে সেই মে মাস, সেই ঘূর্ণিঝড়। আতঙ্কেই একেকটা রাত কাটছে উপকূলের বাসিন্দাদের।