আবর্জনার পাহাড় মেদিনীপুর মেডিক্যালের হস্টেল চত্বরে (উপরে)। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জমে জল (নীচে)।
যত্রতত্র পড়ে আবর্জনা, জমে রয়েছে জলও। জেলার সবচেয়ে বড় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যেন মশার ‘আঁতুরঘর’। অবস্থা তথৈবচ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালেও।
দিন কয়েক আগে গড়বেতা ৩ ব্লকের নবকোলায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই কিশোরীর মৃত্যু হয়। বেশ কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত হন। তারপরই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। মশার বাড়বৃদ্ধি ঠেকাতে শুরু হয় অভিযান। কিন্তু রোগ উপশমের লক্ষ্যে যে হাসপাতালে সাধারণ মানুষ ভর্তি হন, সেখান থেকেই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা বলেন, “হাসপাতাল চত্বর নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। চারপাশে জমে থাকা আবর্জনাও সাফাই হয়।” তাহলে হাসপাতাল চত্বরে আবর্জনা পড়ে থাকে কেন? তন্ময়বাবুর বক্তব্য, “নোংরা থাকার কথা নয়। দেখছি!”
কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে স্বীকার না- করলেও হাসপাতাল চত্বরের পরিবেশ যে পরিচ্ছন্ন নয়, তা একটি চিঠিতেই স্পষ্ট। সূত্রের খবর, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মেদিনীপুর পুরসভায় একটি চিঠি পাঠায় হাসপাতাল। যে চিঠিতে জানানো হয়, নিয়মিত হাসপাতাল চত্বর সাফাই হচ্ছে না। ফলে, হাসপাতাল চত্বরের পরিবেশ দিনে দিনে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখন ৬৬০টি শয্যা রয়েছে। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭৫০- ৮০০ জন। হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, মাসে বহির্বিভাগে রোগী আসেন গড়ে ১৫, ৯০০ জন। জরুরি বিভাগে মাসপিছু গড়ে আসেন ৬,৫৭০ জন। রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বর অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। হাসপাতালে সুস্থ হতে এসে বিপদে পড়বেন রোগী ও তাঁর পরিজনেরা।
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগে জল পেরিয়েই যাতায়াত (উপরে)। বহির্বিভাগ ভবন চত্বর ঢেকেছে আগাছায় (নীচে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, রামপ্রসাদ সাউ।
হাসপাতাল চত্বরে একাধিক ভ্যাট রয়েছে। ভ্যাটের আবর্জনা পরিষ্কার করার কথা পুরসভার। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের দাবি, আবর্জনা নিয়মিতই পরিষ্কার হয়। গত সপ্তাহে হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেও হাসপাতাল চত্বরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা ওঠে। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “হাসপাতাল চত্বর অনেক বড় এলাকা। তাই হয়তো সর্বত্র সমান নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বার নজর দেওয়া হবে!” হাসপাতালের পাশে নিকাশি নালা রয়েছে। নালাগুলের অবস্থাও খারাপ। রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, জমে থাকা জলে মশা জন্মায়।
মঙ্গলবার দেখা গেল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের বহির্ভিভাগে ঢোকার মুখে জমে রয়েছে জল। জল-কাদা এড়িয়ে অন্য পথ ধরে যাতায়াত করছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। এক রোগীর পরিজন তালবাগিচার বাসিন্দা রতন দেব বলেন, “ভাইয়ের কয়েকদিন ধরে জ্বর। জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপের কথা শুনছি। তাই ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল চত্বর পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। কিন্তু যে ভাবে এখানেও জল-জঞ্জাল জমে থাকতে দেখছি, তাতে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।” আর এক রোগীর পরিজনের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে রোগী ভর্তি থাকলে পরিজনেদের থাকতে হয়। চারিদিক পরিষ্কার রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা হাসপাতাল চত্বর সাফাই করার জন্য রয়েছেন ১৮ জন কর্মী। যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। হাসপাতালের এক সাফাই কর্মীর কথায়, “এত বড় এলাকা পরিষ্কার রাখতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। তাই হাসপাতাল ভবনের বাইরে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার করলেও মানুষ এখনও সচেতন নয়। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের এলাকা আবর্জনায় ভরে যায়।’’
ভবনের বাইরে জল জমে থাকার কথা স্বীকার করেছেন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “হাসপাতাল ভবনের বাইরের অংশে দু’একটি জায়গায় জল জমে থাকে জানি। আমাদের সাফাই কর্মী কম। এরপরেও আমরা হাসপাতাল চত্ত্বর পরিচ্ছন্ন রাখতে যথেষ্ট চেষ্টা করি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ বার হাসপাতাল চত্ত্বর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পুরসভাকে দেওয়ার জন্য কথা বলব। প্রয়োজনে পুরকরও দেব।”
এ বিষয়ে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “হাসপাতালের সাফাইয়ের দায় আমাদের নয়। ভবিষ্যতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের হস্তক্ষেপ দাবি করলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”