মাদলে-তাল: জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্বোধনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। বিরোধিতায় মুখর শাহিনবাগ থেকে পার্কসার্কাস।
দেশভাগের ফলে সরাসরি উদ্বাস্তু না হলেও নথিপত্রের অভাবে ভিটে-মাটি হারানোর ভয় বাসা বেঁধেছে আদিবাসীদের মনেও। জল-জমি-জঙ্গলের অধিকার আইনের প্রাসঙ্গিকতা নতুন করে তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বার্তা, ‘‘আমরা কারও জমি জোর করে কাড়তে দেব না। তেমনই কারও নাগরিকত্বও জোর করে ছিনিয়ে নিতে দেব না। দু’টোর কোনওটাই করতে দেব না। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।’’
সোমবার বিকেলে ঝাড়গ্রামে রাজ্যস্তরীয় জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্থ। আমন্ত্রণপত্রে ও সরকারি বিজ্ঞাপনে প্রধান অতিথি হিসেবে নাম থাকলেও আসেননি পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দুর সঙ্গে পার্থকেও গত ডিসেম্বরে সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে যদিও একসঙ্গে দু’জনে জঙ্গলমহলে আসেননি।
এ দিন মঞ্চে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা, প্রাক্তন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন বিরবাহা সরেন, বিরবাহার স্বামী পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ ও শিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিন টুডু, প্রাক্তন সাংসদ উমা সরেন, বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতোরা। ধামসা বাজিয়ে উৎসবের সূচনা করেন পার্থ জানান, লোকশিল্পের সমৃদ্ধ ধারাকে সামনে আনার লক্ষ্যেই এই উৎসবের আয়োজন। পরে বলেন, ‘‘আপনারা কারও কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। সহজ সাধাসিধে মানুষদের দুঃখে রেখে, তাঁদের সংস্কৃতিকে সামনে না এনে আমরা তাঁদের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছি। এখন তাঁরাও সমাজের মূল মুখ। সকলকে মিলেই এগিয়ে যেতে হবে।’’
এ দিন ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ঢিমেতালে চলায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমি জেলাশাসককে জিজ্ঞাসা করলাম, ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়াল তোলাই কি কাজ! এটা যাতে তাড়াতাড়ি শুরু হয়, আপনি নিজে দেখুন। ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা দেড় বছর ধরে শুনছি। কাজে গতি আনতে হবে।’’ ঝাড়গ্রামে বন্ধ জল প্রকল্পের কাজেও গতি আনতে বলেছেন মন্ত্রী। পার্থের মতে, জঙ্গলমহলের উন্নয়নে মমতা কথা রেখেছেন। তবে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
উৎসব উদ্বোধনের পরে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ঘন্টাখানেক বৈঠক করেন তৃণমূলের মহাসচিব। দলীয় সূত্রে খবর, পার্থ জানান, শুভেন্দু ও তিনি কেউ নন। দলনেত্রী মমতার নির্দেশে সবাইকে কাজ করতে হবে। কেউ শুভেন্দুর কাছে এক রকম কথা বলছেন, আবার তাঁর কাছে আর এক রকম বলছেন, এ সব করে লাভ নেই। শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর সব সময় কথা হয়। এ দিনের বৈঠকের বিষয়েও শুভেন্দুকে জানাবেন।