আগাছায় ভরা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়। নিজস্ব চিত্র।
স্কুল চত্বর ও হস্টেল আগাছায় ঢেকেছে। সীমানা পাঁচিল নেই। হস্টেলের পরিকাঠামো বেহাল। এমনকি, সাপে কাটার ফলে এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। তার আগে ওই পড়ুয়াকে হাসপাতালে পাঠাতেও দেরি করা হয়েছে।— এমন নানা অভিযোগে সোমবার দুর্গাপুরের ফুলঝোড়ে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়ের মূল গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকদের একাংশ। আসে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত মহকুমাশাসকের দফতরের আধিকারিকের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
২০০৫-এ চালু হওয়া এই স্কুলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী পড়ুয়ারা এসে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। স্কুল চলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদন ও তত্ত্বাবধানে। হস্টেলটি চলে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের তত্ত্বাবধানে। এই স্কুলের প্রশাসক মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর)। বর্তমানে স্কুলে ২৭৮ জন পড়ুয়া রয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ ডিসেম্বর পরীক্ষার পরে স্কুলের বাইরে দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে ফেরার সময় সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া কুলটির সিদ্ধার্থ মারাণ্ডিকে (১৩) সাপে কাটে। অষ্টম শ্রেণির সোনালি বেসরা জানায়, সিদ্ধার্থ ছুটে হস্টেলের দিকে আসতে আসতে পড়ে যায়। সোনালি তাকে হস্টেলে নিয়ে গিয়ে স্কুলে খবর দেয়। ৬ ডিসেম্বর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় ওই পড়ুয়ার। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিমি কিস্কুর বক্তব্য, “সাপের ভয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকি আমরা। শৌচাগারও মজে গিয়েছে। চার দিক ফাঁকা। উপযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় রাতে ভয় লাগে।”
এই পরিস্থিতিতে সোমবার অভিভাবকেরা স্কুলে জড়ো হন। তাঁদের অভিযোগ, স্কুল চত্বর আগাছায় ঢাকা। সিদ্ধার্থের মৃত্যুর পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। স্কুলের মূল গেটে তালা দিয়ে তাঁরা স্টাফরুমে গিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) সাবর্ণী সেনশর্মার কাছে ক্ষোভ উগরে দেন। অভিভাবকদের অভিযোগ, বেশ কিছুক্ষণ হস্টেলে ফেলে রাখার পরে সিদ্ধার্থকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। কোনও শিক্ষক এগিয়ে আসেননি। স্কুলের এক কর্মী সিটি সেন্টার থেকে ফিরে গাড়ির ব্যবস্থা করার পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সীমানা পাঁচিল, পর্যাপ্ত আলো না থাকায় পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন তাঁরা। স্কুলের পড়াশোনা, হস্টেলের খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। আদিবাসী গাঁওতার তরফে অমিত টুডুর অভিযোগ, “কোন ভরসায় বাবা-মা এই স্কুলে সন্তানকে পাঠাবেন? ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের গাফিলতিতেই স্কুল ও হস্টেলের এই দশা।”
অভিভাবকদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ আসে। মহকুমা প্রশাসনের তরফে দু’জন আধিকারিক দীপক সরকার ও রঞ্জন গুহ স্কুলে আসেন। তাঁরা কথা বলেন অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
সাবর্ণী যদিও বলেন, “সাপে কাটার পরে যত দ্রুত সম্ভব ছেলেটিকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো যায়নি। স্কুল বা হস্টেলে কোনও সাফাইকর্মী নেই। হস্টেলে সুপার নেই। রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল নেই।” তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়গুলি একাধিক বার জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, সিদ্ধার্থের মৃত্যুর পরে অনেকে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের এই স্কুল থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। সাবর্ণী দাবি করেন, তাঁর কাছে এমন কোনও খবর নেই। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় পড়ুয়ারা বাড়ি চলে গিয়েছে বলে জানান তিনি।
মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধি দীপক বলেন, “সব পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। যা যা সমস্যা উঠে এসেছে তা দ্রুত মেটানো হবে।”