খড়্গপুর আইআইটি। —ফাইল চিত্র।
প্রযুক্তিবিদ্যার বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে ছেলের অপমৃত্যু। মাস দশেক আগে অসমের তিনসুকিয়া থেকে খড়্গপুরে এসে র্যাগিং ও ছেলেকে খুনের অভিযোগ তুলে রেহেনা আহমেদ চেয়েছিলেন ‘ইনসাফ’। আইনি লড়াইয়ে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতিষ্ঠানের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসের ধাক্কা খেল খড়্গপুর আইআইটি। খারিজ হয়েছে রাজ্যের আবেদনও। ছাত্র খুনের তদন্তে পুলিশ নয়, বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটে ভরসা রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
মূলত যাদবপুর কাণ্ডের আবহে ফয়জ়ান মৃত্যু এখন ফের চর্চায়। আইআইটির সেই মৃত ছাত্র ফয়জ়ান আহমেদের মা রেহেনা আহমেদও বলছেন, “আমার ছেলের মৃত্যুর পরে পুলিশ ও প্রতিষ্ঠান দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করলে হয়তো বেঁচে যেত যাদবপুরের ছাত্রটিও।” ফয়জ়ানের মৃত্যুর সুবিচার চাইছেন আইআইটির পড়ুয়াও। শুক্রবার ছিল খড়্গপুর আইআইটি-র ৭৩তম প্রতিষ্ঠা দিবস। তার দিন দু’য়েক আগেই আদালতের নির্দেশে জোর ধাক্কা খেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে চলা মামলায় উঠে এসেছে র্যাগিং তত্ত্ব। পুলিশ আত্মহত্যা দাবি করলেও, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে খুনের তত্ত্ব সামনে আসায় বা সিট গঠন করে পুলিশের থেকে তদন্তভার কেড়ে নেয় সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই ডিভিশন বেঞ্চে যায় খড়্গপুর আইআইটি ও রাজ্য সরকার। তবে সিটের তদন্তেই আস্থা রেখে আইআইটি ও রাজ্যের আবেদন খারিজ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
এখন মুখে কুলুপ আইআইটি কর্তৃপক্ষের। এ দিন বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি রেজিস্ট্রার অমিত জৈনকে। তিনি জবাব দেননি এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও। অসমের তিনসুকিয়া থেকে ফোনে ফয়জ়ানের মা রেহেনার অভিযোগ, “আমার ছেলের খুনে আইআইটি ও পুলিশ জড়িত রয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের রায় আমাদের প্রাথমিক জয়। আমি ইনসাফ চাই।” বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে ক্যাম্পাসেও। কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অনামিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “ফয়জ়ান আমাদের বর্ষেরই ছাত্র ছিল। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ঘটনাটি আত্মহত্যা। তবে এখন মামলা গতিপ্রকৃতি দেখে অন্য রকম লাগছে।” মেকানিক্যালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র দীপ্তেন্দু সরকার বলেন, “আমরাও সত্যিটা জানতে চাই।”
আইআইটির হস্টেল থেকে পচাগলা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সেই সময়ের তৃতীয় বর্ষের বিটেক পড়ুয়া ফয়জ়ান আহমেদের দেহ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ছেলের সঙ্গে ধারাবাহিক র্যাগিং চলছিল বলে অভিযোগ ফয়জ়ানের পরিবারের। হস্টেল বদল করা সত্ত্বেও ইলুমিনেশন ও রঙ্গোলির প্রস্তুতি নিয়ে ইচ্ছাকৃত অশান্তি পাকিয়ে ফয়জ়ানকে খুনের অভিযোগ করেন তাঁর মা। ইলুমিনেশনের প্রস্তুতিতে শামিল হতে সিনিয়রদের চাপের মুখে পড়তে হয়, মেনেছেন একাংশ পড়ুয়াও। এখন অবশ্য কর্তৃপক্ষ কড়া হওয়ায় তা বন্ধ হয়েছে। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অর্কপ্রভ মণ্ডল বলেন, “আমার সঙ্গে র্যাগিং হয়নি। আর ফয়জ়ান আহমেদের ঘটনা ছাড়া এমন কিছু শুনতেও পাইনি। তবে মামলার রায়ে যদি প্রতিষ্ঠান কালিমালিপ্ত হয়, তা খারাপ লাগলেও মেনে নিতে হবে।”