রাত জেগে চলছে মণ্ডপ তৈরি। কাঁথি শহরে। —নিজস্ব চিত্র।
নিম্নচাপের দুর্যোগ কেটেছে। শনিবার নীল আকাশে রোদের দেখা মিলেছে। তাতে জেলার অধিকাংশ এলাকার দুর্গা পুজোর উদ্যোক্তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। ব্যতিক্রম শুধু পটাশপুর এবং ময়নার কিছু এলাকা। বাগুই খালের জল উপচে পটাশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। একই রকম জলবন্দি দশা ময়নার বিভিন্ন এলাকাতেও। সেখানে থমকে রয়েছে মণ্ডপ তৈরির কাজ।
এ দিন থেকে আবহাওয়ার পরিস্থিতির উন্নত হয়েছে। আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও সূর্যের দেখা মিলেছে। নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় শুরু হয়েছে থমকে থাকা পুজো মণ্ডপ তৈরির কাজ। কোথাও মহালয়া আবার কোথাও দ্বিতীয়, তৃতীয়ায় পুজোর উদ্বোধন হবে। হাতে আর এক সপ্তাহ বাকি নেই। তাই দিনরাত করে চলছে, মণ্ডপ তৈরির কাজ।
৩৫তম বছরে পা দিয়েছে কাঁথি শহরের পুরাতন দিঘা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ইউথ গিল্ড ক্লাবের পুজো। এবার তাদের থিম 'পোড়া মাটির দেশে'। ক্লাবের এক কর্মকর্তা সঞ্জয় মিশ্র বলছেন, ‘‘প্রত্যেকবার আমাদের পুজো মণ্ডপ দেখার জন্য দর্শকদের একটা আলাদা উন্মাদনা থাকে। নজর কাড়া থিম নিয়ে এবারেও আমরা সামিল হওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টির কারণে সেই প্রস্তুতি অনেকটাই থমকে গিয়েছিল। আবহাওয়ার খানিকটা উন্নতি হওয়ায় নতুন উদ্যমে পুজো মণ্ডপের কাজ শুরু হয়েছে।’’
কাঁথি শহরের প্রভাত কুমার কলেজের কাছে হয় ক্লাব নান্দনিকের পুজো। ‘পরম্পরা’ থিমের আদলে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ। বিগ বাজেটের এই পুজোর প্রস্তুতিতে বাধ সাধে আবহাওয়া। আগামী ১৬ অক্টোবর দ্বিতীয় তিথি থেকে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ক্লাব। তাই বৃষ্টি থামতেই শুক্রবার রাত থেকে চলছে জোরদার প্রস্তুতি। বাড়তি আলো জ্বেলে হচ্ছে পুজো মণ্ডপ তৈরি। ক্লাবের তরফে রামচন্দ্র পন্ডা বলছেন, ‘‘পরিস্থিতির উন্নতি হতেই সময় নষ্ট না করে দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলতে চাইছি।’’
মুখভার অবশ্য বাগুই খাল সংলগ্ন এলাকার পুজো উদ্যোক্তাদের। জমা জল না সরে যাওয়ায় কাজ সময়ে শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কোথায় আবার জল নামলেও কর্দমাক্ত পরিস্থিতিতে কাজ এগোচ্ছে না। লক্ষ্মী বাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো মণ্ডপের মধ্যে গত চারদিন ধরে হাঁটু সমান জল রয়েছে। জল কাদা, ও নোংরা, আবর্জনা জমে এলাকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। পটাশপুরের দাইতলা বাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো সমিতির পুজো বামুন্দা খালের পাড়ে নীচু এলাকায় হয়। থিমের পুজোর জন্য বাঁশের কাঠামো তৈরি কাজ পুরো দমে চলছিল। বৃষ্টিতে খালের জল উপচে এলাকা জলমগ্ন করেছে। ওই পুজোর উদ্যোক্তা মৃণালকান্তি দাস বলেন, ‘‘সময় মতো মণ্ডপ প্রস্তুতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’’
এ দিন কিছু এলাকায় জল নামলেও বাঁশের কাঠামো অনেকটাই নড়বড়ে হয়েছে বলে দাবি। কর্দমাক্ত চত্বরে কাঠামো বাঁধার কাজ ও শৌখিন জিনিসের কারুকার্য করতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়ছেন শিল্পীরা। এক মণ্ডপ শিল্পী শান্তনু মাইতি বলছেন, ‘‘জমা জলে কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মাটিতে পোঁতা বাঁশের কাঠামো নড়বড়ে অবস্থায় হয়েছে। নতুন করে সব কিছু কাজ করতে হচ্ছে। সময়ে কাজ শেষ করতে হিমশিম দশা হবে।’’