রক্ষণাবেক্ষণ: বেড়ে উঠছে গতবছর জেলা প্রশাসনের লাগানো ম্যানগ্রোভ। ভগবৎপুর রেঞ্জের কিশোরীনগর গ্রামে সপ্তমুখী নদীর চরে। নিজস্ব চিত্র।
পাখির চোখ ২০২৪, লোকসভা ভোট। তার আগে পঞ্চায়েত ভোটও রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে কি সেই অঙ্কেরই প্রতিফলন! রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাপ্তি বিচারে তেমনই চর্চা শুরু হয়েছে।
এ বারের বাজেটে উপকূল রক্ষায় ম্যানগ্রোভ রোপণ কর্মসূচিকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ফুল চাষেও অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা রয়েছে সাধারণ বাজেটে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘ফুল চাষে কোন কোন জায়গায় গুরুত্ব দেওয়া যায় তা চিহ্নিত করা হয়েছে।’’ উল্লেখযোগ্য ভাবে, নদিয়ার পরে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়া ব্লকে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপন্ন হয়। এখান থেকে সারা রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও ফুল রফতানি করা হয়।
ফলে, এই দুই ঘোষণাই জেলার জন্য লাভজনত হওয়ার কথা। যদিও তৃণমূলের দাবি, যে কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজের মজুরি আটকে রেখেছে, তাদের কাছে এ সবই ভোটের আগে চমক বই কিছু নয়। একই সঙ্গে তারা মনে করাচ্ছে, একশো দিনের কাজে ম্যানগ্রোভ রক্ষণা
এ রাজ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্র ঘেঁষা। প্রায় ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতটের অধিকাংশই অরক্ষিত। ২০২০ সাল থেকে পরপর আমপান, বুলবুল, ফনি এবং ইয়াসের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই উপকূল। বুধবার বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ‘‘সমুদ্রতটে ম্যানগ্রোভ চারা লাগানোয় জোর দেওয়া হবে। একে ১০০ দিনের কাজে মিশিয়ে দেওয়া হবে। এতে স্থানীয় মানুষের আয় বাড়বে।’’ যে জেলায় ঝড়ের পরে সরকারি ক্ষতিপূরণ বিলিতে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে ঝড় ঠেকাতে ম্যানগ্রোভ লাগানোর প্রকল্পে কেন্দ্রের গুরুত্ব, রাজনৈতিক ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু। পরে তিনি নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে বিধায়ক এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হন। এখন রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রধান ‘মুখ’ শুভেন্দুই। দ্বিতীয় মোদী সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে তাঁর জেলার প্রাপ্তি যোগ ঘিরে তাই রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছে। দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যে কোথায় কী সমস্যা এবং সম্ভাবনা রয়েছে সে সম্পর্কে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবগত। তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়মিত এ সব জানিয়ে থাকেন। পূর্ব মেদিনীপুরের এই প্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত এবং খুশি।’’ বাজেট প্রসঙ্গে শুভেন্দুর বাবা তথা কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রাজ্য সরকার চাইলে পূর্ব মেদিনীপুর কেন, যে কোনও জায়গারই উন্নতি হতে পারে। না চাইলে হবে কী করে।’’
তৃণমূল অবশ্য বিষয়টিকে ভোট-অঙ্ক হিসাবেই দেখছে। জেলা প্রশাসন এবং বন দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে এক হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হয়েছে। তার রক্ষণাবেক্ষণ একশো দিনের কাজের প্রকল্পে করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। সে ক্ষেত্রেও মজুরির ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা বাকি রয়েছে। ফলে গত এপ্রিল থেকে দিঘা মোহনা সংলগ্ন এলাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় ম্যানগ্রোভ রক্ষণাবেক্ষণ থমকে গিয়েছে। আর ফুল চাষের এলাকায় সরকারি হিমঘর না থাকায় চাষিদের যে সমস্যায় পড়তে হয়, সে বিষয়েও কেন্দ্রের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘‘বিশেষ কারও জন্য বাজেটে প্রকল্প ঘোষণা করা হয় না। এমনিতেই একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের কাছে আমাদের প্রচুর পাওনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব মেদিনীপুরে ম্যানগ্রোভ এবং ফুল চাষের বিস্তারে নিয়মিত চেষ্টাচালিয়ে যাচ্ছেন।’’