বিজেপি নেত্রীর ভারতী ঘোষ। —ফাইল চিত্র
ভোটের প্রচার পর্বে কেশপুরের মাটিতে ওসি হীরক বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে দেখা গিয়েছিল ঘাটাল লোকসভার বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে। ভোটে হেরেছেন ভারতী। তবে দু’দিন আগে কেশপুরে এসে সংবর্ধনায় ভেসেছেন জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী। তাঁর সভায় ভিড় উপচে পড়েছিল।
ভারতী ফেরার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হল কেশপুরের ওসি হীরক বিশ্বাসকে। তাঁকে ডিআইবি-তে বদলি করা হয়েছে। ভারতীর সভার দিনও ‘ডিউটি’ করতে দেখা গিয়েছে হীরককে। তাই তাঁর এই ঝটিতি বদলি ঘিরে জল্পনা ছড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই বদলি ‘শাস্তিমূলক’। জেলা পুলিশ অবশ্য এই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘কেশপুরের ওসি-র বদলি হয়েছে। এটা রুটিন বদলি।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, বদলির নির্দেশ পেয়ে কেশপুর ছেড়েছেন হীরক। কেশপুরের নতুন ওসি হচ্ছেন প্রশান্ত কীর্তনিয়া। প্রশান্ত এক সময়ে আনন্দপুর থানার ওসি ছিলেন। পরে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তিনি মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ছিলেন। আনন্দপুরের পাশেই কেশপুর। আনন্দপুর থানার ওসি থাকাকালীন নানা ঘটনায় কেশপুরে এসেও কাজ করার ‘অভিজ্ঞতা’ রয়েছে প্রশান্তর। এখানকার বেশিরভাগ এলাকাই তাঁর চেনা। এই দিকটি দেখেই তাঁকে কেশপুরের ওসি করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
পুলিশের এক সূত্রে খবর, শুধু হীরক নন, বুধবার জেলায় সব মিলিয়ে চারজন সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) বদলি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন দেবাশিস দাস, প্রবীর সাহাও। দেবাশিস খড়্গপুর টাউন থানায় ছিলেন। তাঁকে গড়বেতা ট্রাফিকের ওসি করা হয়েছে। প্রবীর গড়বেতা ট্রাফিকের ওসি ছিলেন। তিিনও ডিআইবি-তে বদলি হয়েছেন।
কেন সরতে হল হীরককে?
পুলিশের এক সূত্রে খবর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে তাঁর ‘ভূমিকা’ নিয়ে জেলা পুলিশের কাছে কিছু নালিশ পৌঁছেছিল। শাসক দলের কেউ কেউ না কি তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকেছিলেন। কেশপুরে এখন যে হারে বাড়ছে বিজেপি, তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের কাছেও। বিজেপির এই ‘বাড়বাড়ন্তের’ স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে মঙ্গলবার ভারতীর সফরের দিন। সপ্তাহ খানেক আগে কেশপুরে এসেছিলেন তৃণমূলের তারকা- সাংসদ দেব। সেদিন কার্যত নিঃসঙ্গ দেখিয়েছিল তাঁকে। লোকসভা ভোটের পরে মঙ্গলবার প্রথম কেশপুরে আসেন ভারতী। সংবর্ধনায় ভাসেন তিনি। ফুল-মালা-শঙ্খধ্বনিতে বরণ করে নেওয়া হয় তাঁকে। ওই দিন চরকার সভা থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়ান ভারতী। সুদে-আসলে সব ফেরত দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, বিজেপির সভায় যে ‘ব্যাপক’ জনসমাগম হয়েছে, সেই খবর না কি থানার মাধ্যমে সময় মতো পৌঁছয়নি জেলা পুলিশের কাছে। ওই দিন বিজেপির সভা, মিছিলের কোনও পুলিশি-অনুমতিও ছিল না। অনুমতি ছাড়াই কী ভাবে সভা হল, শাসক-শিবিরে সেই প্রশ্নও ওঠে। এই সব জল্পনা-চাপানউতোরের মধ্যেই বদলির নির্দেশ বেরোয় হীরকের। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেশপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে পুলিশের কড়া নজরই রয়েছে।’’