এক নেতা বিঁধছেন অন্যকে

শাসকের ঘরে শুরু দুর্নীতির নারদ নারদ

পূর্ব মেদিনীপুরে এ বার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে প্রভূত সম্পত্তি করার অভিযোগ তুললেন শাসকদলেরই আরেক নেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০০:০৮
Share:

সস্ত্রীক দিবাকর জানা। নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটমানি-মন্তব্যের পরে রাজ্য জুড়ে সরব হয়েছে আমজনতা। দিকে দিকে তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে, টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরে এ বার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে প্রভূত সম্পত্তি করার অভিযোগ তুললেন শাসকদলেরই আরেক নেতা। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে শুক্রবার জেলা নেতৃত্বকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন ওই পঞ্চায়েত সমিতিরই খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন। নৈতিকভাবে দিবাকরের কাজে সমর্থন না থাকায় দলের সব দ্বায়িত্ব ও কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে জয়দেব নিজেও অব্যাহতি চেয়েছেন।

নন্দীগ্রামের এই জেলায় কাটমানি-বিক্ষোভের দৃশ্য সে ভাবে চোখে পড়েনি। তবে এ বার খোদ শাসকদলের নেতা সতীর্থের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলায় জেলায় শোরগোল পড়েছে। বিষয়টিতে জুড়ে গিয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। দলেরই একটি সূত্রে খবর, দিবাকর ও জয়দেবের বিরোধ রয়েছে বেশ কিছু দিন ধরেই। দিবাকর অধিকারীদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তবে জয়দেব ঠিক ততটা কাছের নন। তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, বিরোধের মূল এখানেই।

Advertisement

চিঠিতে জয়দেবের অভিযোগ, ‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানা (লালু) ও তাঁর পরিবার (স্ত্রী) জেলা পরিষদ সদস্যা তনুশ্রী জানা দলের নাম ব্যবহার করে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন প্রভূত সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, যা এলাকায় দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে। ওঁদের সঙ্গে দলের কাজে থাকার সুবাদে আমাদেরও জনসমক্ষে মানুষ হেয় প্রতিপন্ন করছেন, নেকনজরে দেখছেন না।’ চিঠিতে জয়দেবের আরও অভিযোগ, ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন দিবাকর। রিসর্ট, ফ্ল্যাট, সোনার দোকান-সহ অল্পদিনে যে বিপুল সম্পত্তি করেছেন, তা দেখে মানুষ অবাক। এ সবের ফল ভোটের বাক্সেও পড়ছে বলে জয়দেবের দাবি। এই পরিস্থিতিতে দলীয় নেতৃত্বের কাছে জয়দেব দাবি করেছেন, ‘‘দলীয়ভাবে ওঁদের (দিবাকরদের) বিরুদ্ধে তদন্ত করে দল ও প্রশাসনিক সব পদ থেকে অব্যাহতি বা পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া উচিত।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী ও রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে এই চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান জয়দেব। চিঠির সঙ্গে দিবাকর ও তাঁর স্ত্রী তনুশ্রীর নামে জমি কেনার প্রমাণ হিসেবে ভূমিসংস্কার দফতরের নথি, রিসর্ট ও সোনার দোকানের ছবিও দিয়েছেন জয়দেব।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী অবশ্য বলেন, ‘‘দিবাকরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি। তবে দলের তরফে সব দিক পর্যালোচনা হচ্ছে। কর্মাধ্যক্ষের পদত্যাগ সংক্রান্ত চিঠি এখনও আসেনি। এলে দেখব।’’

অধিকারীদের খাসতালুক পূর্ব মেদিনীপুরে এ বারও লোকসভার দু’টি আসনেরই জিতেছে তৃণমূল। তবে খেজুরি-সহ নানা জায়গায় ভোট কমেছে। ভোটের পর থেকে জেলার নানা প্রান্তে বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতও হচ্ছে। ক’দিন আগে বিজেপির নামে কাটমাটি প্রসঙ্গে জেলার বিভিন্ন তৃণমূল নেতার সম্পত্তির খতিয়ান দিয়ে, বাড়ির ছবি-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। ভাইরাল হওয়া সেই সব ছবিতে দিবাকরের রিসর্টও ছিল। এ বার খোদ দলেরই এক নেতা তা নিয়ে সরব হওয়ায় তোলপাড় চলছে জেলায়। উল্লেখ্য, দিবাকর কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনেরও নেতা।

দিবাকরের দাবি, ‘‘আমি কারও থেকে টাকা নিয়েছি প্রমাণ করুক। মিথ্যা অভিযোগ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের ক্ষতি করার জন্য বিজেপির মদতে এ সব করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর। পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠক ডেকে জয়দেবের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা ও মানহানির মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন দিবাকর। সেই সঙ্গে জয়দেবের নামেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন দিবাকর। তাঁর কথায়, ‘‘জয়দেবের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে বেকারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বার তা প্রকাশ্যে আনা হবে।’’

জয়দেব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। আর বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের কোন্দলেই এ সব হচ্ছে। এতে বিজেপির মদত নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘তৃণমূলের যে সব দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে এতদিন কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি, বিজেপি এখন সেই প্রতিবাদের পরিবেশটা তৈরি করেছে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement