প্রতীকী ছবি।
নিয়ম তো রয়েছে। আছে নিয়মের ফাঁকও।
নিয়ম বলছে, জেলা প্রশাসন থেকে বাজি বিক্রি ও তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়। বাজি বিক্রি করার অনুমতি পাওয়া খাতায়-কলমে মোটেও সহজ নয়। বাজি বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটির অনুমতি নিতে হয়। সেখানে জলের ব্যবস্থা রাখতে হয় ও দোকানে রাখতে হবে অগ্নিনিবার্পক যন্ত্র। বাজারে ঢোকার জন্য রাখতে হবে আলাদা গেট।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এক মাসের জন্য বাজি বিক্রির অনুমতি মেলে। তার জন্য ১০০০ টাকা জমা দিতে হয়। লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের জন্য লাগে ৬০০ টাকা। নিয়ম না মানলে হতে পারে জরিমানা। জেলও। তবে এই নিয়ম পুরোটাই আতসবাজি ও কম আওয়াজের শব্দবাজির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নির্ধারিত নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে আওয়াজ হয় এমন যে কোনও বাজিই নিষিদ্ধ।
দীপাবলির আগে রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের আনাচে কানাচে আতসবাজির সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয় নিষিদ্ধ শব্দবাজি। নিয়মের ধারেকাছে না গিয়ে অস্থায়ী দোকান করে অথবা চৌকি পেতেও ব্যবসা চলে। অগ্নিনিবার্পক যন্ত্র তো দূরের কথা, বেশিরভাগ জায়গায় জলের ব্যবস্থাটুকুও থাকে না। পুলিশের তথ্য বলছে, পুজোর মরসুম গুলিতে মহকুমা জুড়ে কয়েকশো কুইন্টাল আতসবাজি বিক্রি হয়। আতসবাজির সঙ্গেই মেশানো থাকে শব্দবাজি। অনেক সময়ে শব্দবাজি রাখার জন্য আতসবাজিও বাজেয়াপ্ত করে নেয় পুলিশ। তবে তারপরেও ব্যবসা বন্ধ হয় না। নতুন করে জিনিস তুলে চলে বিক্রি।
ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, কয়েকশো দোকানে বাজি বিক্রি হচ্ছে। বাজি বিক্রির জন্য যে অনুমতি নিতে হয়, সেটা বেশিরভাগ দোকানদার জানেনই না। যাঁরা জানেন তাঁদের দাবি, নিয়মের ঝক্কি সামলে ব্যবসা করলে লাভ কমে যাবে। তাই পুলিশ ও শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই কাজ চলে। বাজি বিক্রির সময় দুর্ঘটনা ঘটলে তো জীবনহানি পর্যন্ত হতে পারে? ঘাটাল শহরের এক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, “নিয়ম মানলেও ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়। বারুদ তো আর কারও কথা শুনবে না। তাই নিয়মটাও মানা হয় না।”
দোকানদারদের তো বটেই, যাঁরা বাজি তৈরি করেন তাঁদের প্রাণের ঝুঁকিও যথেষ্ট। মশলা বা বাঁধনে গোলমাল হলেই ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। হতে পারে অঙ্গহানিও। সে সবের পরোয়া না করে ফি বছর রমরমিয়ে চলে এই ব্যবসা। ঘাটাল-দাসপুর এবং চন্দ্রকোনায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বাজি তৈরি হয়। ঘাটাল শহরের এক বাজি বিক্রেতা বলেন, “এই ব্যবসায় ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ৫০-৬০ টাকা লাভ থাকে। ঝুঁকি িনতেই হয়।’’
নিয়ম না মেনে বাজি বিক্রি চললেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? ঘাটাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি দেবাশিস হড় বলেন, ‘‘এটা অনেকের জীবিকার প্রশ্ন। তাই কী করা উচিত সেটা পুলিশ-প্রশাসনকেই বলতে হবে।” জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, “জেলা জুড়েই অভিযান চলছে। নিয়ম না মেনে বাজি বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”