নিমতৌড়িতে এভাবেই বাঁধা হয়েছিল সুপারি বিক্রেতাকে। ফাইল চিত্র
কখনও ছেলেধরা সন্দেহে, কখনও বা মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে— স্রেফ সন্দেহের বশে গত এক বছরে তমলুক মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় বহু গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার নিমতৌড়ি বাজারে প্রকাশ্য রাস্তায় দুই ব্যক্তিকে বাঁশের খুঁটি এবং বিদ্যুতের তারের বেঁধে মারের ছবি সামনে এসেছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও অভিযুক্তেরা অধরা। পুলিশের অবশ্য দাবি, সুপারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে রেষারেষির জেরেই দুই যুবককে আটকে রাখা হয়েছিল। সামান্য মারধর করা হলেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি।
শুক্রবার বিকালে তমলুকের নিমতৌড়ি বাজারে এক ব্যবসায়ীর আড়তে কাঁচা সুপারি বিক্রি করতে আসা দু’জন যুবককে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আহত যুবকদের উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনায় বাজারের এক সুপারি ব্যবসায়ী-সহ স্থানীয় লোকজনদের একাংশ জড়িত রয়েছে ওই দুই যুবকের পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই ওই সুপারি ব্যবসায়ী গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তমলুকের শ্রীরামপুর এলাকার দোবান্দি গ্রামের বাসিদা ওই দুই যুবককে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। যদিও সুপারি ব্যবসায়ী-সহ অন্য অভিযুক্তদের কেউই গ্রেফতার হয়নি।
তমলুক থানার এক পুলিশ আধিকারিকের অবশ্য দাবি, সামান্য মারধর করা হলেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি। মারধরের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ধরতে তদন্ত করা হচ্ছে। জেলার পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘অল্প মারধর হয়েছে। তবে এটা গণপিটুনির ঘটনা নয়। গণপিটুনির মতো ঘটনা রুখতে প্রচার চলছেই।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, প্রকাশ্য রাস্তায় কি এ ভাবে বেঁধে মারধরও করা যায়? পাশাপাশি প্রশ্ন, ঘটনাস্থলের মাত্র ২০০ মিটার দূরে ট্র্যাফিক পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বিষয়টি জানতে পারলেন না কেন? সে ব্যাপারে পুলিশের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
মারধরের ঘটনায় নিমতৌড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক মহাদেব জানা বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি বাজারে ছিলম না। পরে ঘটনার কথা জেনেছি। ওই যুবকদের মারধর করা ঠিক হয়নি। এ ধরনের ঘটনা আমরা সমর্থন করি না।’’
গত এক বছরে তমলুক মহকুমায় গণপিটুনির শিকার হয়েছে পুলিশও। মৃত্যুর হয়েছে এক জনের। গণপিটুনি রুখতে, মানুষকে সচেতন করতে জেলা পুলিশের তরফে প্রতিটি থানা এলাকায় মাইকে প্রচার করা এবং বাজার ও অফিসের সামনে ব্যানার দেওয়া হয়েছিল। তাতে জানানো হয়, সন্দেহজনক ব্যক্তি নজরে পড়লে পুলিশকে জানাতে। কোনও ভাবেই যেন নির্যাতন না করা হয়। কিন্তু ওই প্রচারের পরেও অনভিপ্রেত ঘটনা যে একেবারেই এড়ানো যায়নি, শুক্রবারের ঘটনা তার প্রমাণ।