মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সভায় প্রায়ই বলছেন, রাত-বিরেতে বহিরাগত দেখলেই খবর রাখতে। দলের কর্মীরা সেই খবর তো রাখছেনই, সঙ্গে নিজের দলের কেউ গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কিনা সেই খবরও রাখতে শুরু করেছেন তাঁরা। ছবিটা গড়বেতার তিন ব্লকেই। সুকৌশলে এই খবরের খোঁজে তৃণমূলের ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরি করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে।
গড়বেতা ১, গড়বেতা ২ অর্থাৎ গোয়ালতোড়, গড়বেতা ৩ অর্থাৎ চন্দ্রকোনা রোড— তিনটি ব্লক এলাকাতে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে গত লোকসভা ভোটের পর থেকে। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তৃণমূল থেকে তাঁর অনুগামী অনেকেই দলবদল করে গেরুয়া শিবিরে এসেছেন। গোয়ালতোড়ের দুই প্রথম সারির তৃণমূল নেতা-নেত্রী দুলাল মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্যা কাবেরী চট্টোপাধ্যায় শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর তারপর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা, দলের আরও কেউ কেউ তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে।
একই ছবি চন্দ্রকোনা রোডেও। এখানকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকাশদীপ সিংহ বিজেপিতে যাওয়ায় তাঁর অনুগামী তৃণমূলের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কিনা, তা নিয়েও জল্পনা তৃণমূলের অন্দরে। গড়বেতায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কেউ দল না ছাড়লেও, তাঁদের মধ্যে শুভেন্দু অনুগামী অনেকে আছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কিনা, তা নিয়ে চর্চা চলছে তৃণমূলের ভিতরে।
এই আবহে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শে গড়বেতার তিনটি ব্লক এলাকাতেই তৃণমূলের অন্দর থেকে গোপনে খবর নেওয়া শুরু হয়েছে যে দলের কেউ তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কিনা। তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘বুথস্তরে কিছু কর্মী ওদের সঙ্গে (বিজেপি) সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করলেও, অঞ্চল ও ব্লক স্তর থেকে সেরকম খবর আসেনি।’ গড়বেতা ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ গোপনে খবর রাখার বিষয়টি খোলসা না করলেও ইঙ্গিতে বলেন, ‘‘আমরাও তো বহুদিন ধরে রাজনীতি করছি, সবার খবরই তো রাখতে হবে!’’ চন্দ্রকোনা রোড ব্লকের তৃণমূল সভাপতি রাজীব ঘোষ অবশ্য স্পষ্টই মানছেন, ‘‘কে, কোথায় কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তার খবর তো রাখতেই হবে।’’
সরাসরি জবাব এড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘প্রকৃত তৃণমূলের কর্মীরা কেউ বিজেপিতে যাবেন না।" এ সবকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। দলের জেলা সহ-সভাপতি মদন রুইদাস বলেন, ‘‘তৃণমূলের সব চেষ্টাই জলে যাবে। দলটাই আর থাকবে না।’’