সবুজ-মানুষ: নিজের পোঁতা গাছের সঙ্গে নবকুমার। নিজস্ব চিত্র
গাছ লাগাতেন যুগলপ্রসাদ। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুলের বীজ এনে জঙ্গলের মধ্যে পুঁতে দিতেন তিনি। আর অপেক্ষা করতেন কবে ফুল ফুটবে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের যুগলপ্রসাদ।
জামবনির ছোট ঘং গ্রামের বছর পঁচিশের যুবক নবকুমারও যেন যুগলপ্রসাদ। কবে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ধরবে, দিন গোনেন নবকুমার মাহাতো। গ্রামে রাস্তার ধারে কয়েক বছর ধরে রোপণ করেছেন কয়েকশো কৃষ্ণচূড়া। বেশ কিছু গাছ ডালপালা মেলেছে ইতিমধ্যে। এবার ফুলে রঙিন হওয়ার পালা।
প্রতি বছর বর্ষায় গাছের চারা কিনে রাস্তার ধারে রোপণ করেন নবকুমার। তার পরে সেই চারা রক্ষায় চারপাশে বাঁশ-কঞ্চির বেড়া দিয়ে দেন। গ্রামের রাস্তার সৌন্দর্যায়নের সঙ্গে এলাকা সবুজে ভরিয়ে দেওয়াটাও লক্ষ্য নবকুমারের। বাসিন্দাদেরও নবকুমার বোঝান সবুজের গুরুত্ব। বোঝান, ‘গাছ বাঁচলে প্রাণও বাঁচবে।’
কেন এমন উদ্যোগ? নবকুমারের কথায়, ‘‘বছর দশেক আগে স্কুলে পড়তাম। জঙ্গলমহল জুড়ে তখন অশান্তি। একের পর এক গাছ কেটে রাস্তা আটকে চলছে অবরোধ আন্দোলন। সেই সময়ে খবরের কাগজে পড়েছিলাম অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলে কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিষয়টা খুবই নাড়া দিয়েছিল।’’ তখনই সঙ্কল্প করেছিলেন নবকুমার, গ্রামের চারপাশ সবুজে ভরিয়ে তুলবেন। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর জেঠতুতো দাদা পেশায় ব্যবসায়ী চন্দন মাহাতো। যেমন ‘আরণ্যক’এ সাহায্য করেছিলেন মহাল ম্যানেজার সত্যচরণ। নবকুমারকে চারা কেনায় আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন চন্দন। নবকুমার গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে রাস্তার ধারে গাছ লাগাতে শুরু করেন। গত তিন বছরে মাথা তুলেছে একের পর এক গাছ। ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী নবকুমার শুধু নিজের গ্রামেই গাছ লাগিয়ে থেমে থাকেননি। চিল্কিগড় যাওয়ার রাস্তার ধারেও চারা লাগিয়েছেন তিনি। নবকুমার জানান, ছুটির পরে বাড়ি ফেরার পথে বেড়ে ওঠা কৃষ্ণচূড়া গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে খুশির অনুভূতি হয় নবকুমারের। জামবনির ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার গোপালকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘নবকুমার একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করছেন।’’
যুগলপ্রসাদের সঙ্গে আরেকটি বিষয়েও মিল রয়েছে নবকুমারের। জঙ্গলে, সরস্বতী কুণ্ডির পাশে ফুলের গাছ লাগানোর জন্য যুগলপ্রসাদকে পাগল ভাবত লোকে। নবকুমারের বন্ধু ও গাছ লাগানোর সঙ্গী সুজিত পাত্র, জয়দীপ মাহাতো বলেন, ‘‘নবকুমারের এমন কাজে অনেকে আগে হাসাহাসি করত। এখন গাছগুলো রাস্তার ধারে শোভা বাড়াচ্ছে দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।’’